পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৬৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংস্কৃতভাষা ও সংস্কৃতসাহিত্যশাস্ত্রবিষয়ক প্রস্তাব ७२१ এই গ্রন্থে চন্দ্রাপীড়নামক রাজকুমার ও গন্ধৰ্ব্বরাজ চিত্ররথের কন্যা কাদম্বরীর বৃত্তাস্ত বর্ণিত হইয়াছে। এই গদ্যকাব্যের যে স্থলে, মহাশ্বেতানামী এক তপস্বিনী, চন্দ্রাপীড়ের নিকট, পরিদেবিতপরিপূর্ণ আত্মবৃত্তান্ত বর্ণন করিতেছেন, ঐ অংশ এমন মনোহর যে বোধ হয় কোন দেশের কোন কবি তদপেক্ষায় অধিক মনোহর রচনা বা বর্ণনা করিতে পারেন নাই। মহাশ্বেতার উপাখ্যান এই অত্যুৎকৃষ্ট কাব্যের সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট ভাগ । কাদম্বরী, এইরূপ অশেষগুণসম্পন্ন হইয়াও, দোষস্পশশূন্য নহে। বাণভট্ট মধ্যে মধ্যে শব্দশ্লেষ ও বিরোধাভাসঘটিত রচনা করিয়াছেন । ঐ সকল স্থলে গ্রন্থকৰ্ত্তার অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শিত হইয়াছে ; এবং ভারতবর্ষীয় পণ্ডিতেরাও ঐরূপ রচনাকে চিত্তরঞ্জন জ্ঞান করিয়া থাকেন, যথার্থ বটে ; কিন্তু ঐ সকল স্থল যে দুরূহ ও নীরস, ইহা অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবেক । এতদ্ব্যতিরিক্ত, মধ্যে মধ্যে দীর্ঘসমাসঘটিত অতি দীর্ঘ দীর্ঘ বাক্য আছে। এই দ্বিবিধ দোষস্পর্শ না থাকিলে কাদম্বরীর ন্যায় কাব্যগ্রন্থ অতি অল্প পাওয়া যাইত । দুর্ভাগ্যক্রমে, বাণভট্ট আপন গ্রন্থ সমাপন করিয়া যাইতে পারেন নাই । তিনি যে পৰ্য্যন্ত লিখিয়া গিয়াছিলেন, তাহ কাদম্বরীর পুৰ্ব্বভাগ নামে প্রসিদ্ধ। তদীয় পুত্ৰ উপাখ্যানের উত্তরভাগ সঙ্কলন করিয়াছেন। কিন্তু পুত্র পৈতৃক অলৌকিক কবিত্বশক্তি বা অসাধারণ রচনাশক্তির উত্তরাধিকারী হয়েন নাই। উত্তর ভাগ কোন ক্রমেই পূৰ্ব্ব ভাগের যোগ্য নহে । দশকুমারচরিত দশকুমারচরিত এক অত্যুত্তম গদ্যগ্রন্থ। কিন্তু কাব্যাংশে তাদৃশ উৎকৃষ্ট নয়। রচনা অতি উত্তম বটে, কিন্তু কাদম্বরীর রচনার স্যায় চমৎকারিণী ও চিত্তহারিণী নহে। এই গ্রন্থে নানা বিষয়ের বর্ণনা আছে ; কিন্তু বর্ণনা সকল যেরূপ কৌতুকবাহিনী, সেরূপ রসশালিনী নহে । পাঠ করিলে খ্ৰীত ও চমৎকৃত হওয়া যায়, দশকুমারচরিত সেরূপ গ্রন্থ নয়। গ্রন্থকৰ্ত্তার নাম দণ্ডী । দশকুমারচরিতশব্দে দশ কুমারের বৃত্তাস্তবর্ণনাত্মক গ্রন্থ বুঝায়। কিন্তু যে দশকুমারচরিত দণ্ডিপ্রণীত বলিয়া প্রচলিত, তাহাতে আট কুমারের চরিত্র মাত্র বর্ণিত আছে। স্বতরাং, এই গ্রন্থ অসম্পূর্ণবৎ বোধ হইতেছে। যেরূপে গ্রন্থের আরম্ভ হইতেছে, তাহ কোন ক্রমেই সংলগ্ন বোধ হয় না। আমরা যে সকল ব্যক্তি ও বৃত্তান্তের বিষয় বিন্দু