পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিশুচর্য্যা ও সন্তানশিক্ষা
২৫

বঙ্গের শুভদিনের সুপ্রভাতে বীরসিংহ ক্ষুদ্র পল্লীর দরিদ্র ব্রাহ্মণ ঠাকুরদাসের পর্ণকুটীরে বীরশিশু ঈশ্বরচন্দ্র জন্মগ্রহণ করিলেন। পুণ্যশীলা বীরমাতা ভগবতী দেবীর পবিত্র অঙ্কে বিরাজমান হইয়া তাঁহাকে ধন্য করিলেন।


চতুর্থ পরিচ্ছেদ॥ শিশুচর্য্যা ও সন্তানশিক্ষা

 সন্তান ভূমিষ্ঠ হইয়াই স্নেহময়ী জননীর ক্রোড়ে আশ্রয় প্রাপ্ত হয়, এবং যতকাল পর্য্যন্ত স্বাধীন ভাবে গতিবিধি করিতে না পারে, ততকাল জননীর শিক্ষাধীন থাকিয়া, শশিকলার ন্যায় অনুদিন বর্দ্ধিত হইতে থাকে। এই সময়ে প্রতিনিয়ত জননীর নিকটে অবস্থিতি করায় শিশু যে সকল শিক্ষা লাভ করে, বয়োবৃদ্ধিসহকারে তৎসমুদয়ের বিকাশ ভিন্ন বিনাশ হইতে প্রায়ই দেখা যায় না। সন্তানবৎসলা জননীর অকৃত্রিম স্নেহের প্রভাব এতই প্রবল যে, শিশু তাঁহারই প্রতি সর্ব্বাপেক্ষা অধিক অনুরক্ত হয় এবং তাঁহার আচার, ব্যবহার, রীতি, নীতির অনুকরণ করিয়া থাকে। সুতরাং মাতার দোষ গুণ সন্তানেই সংক্রামিত হইয়া পড়ে।

 যে শিক্ষা দ্বারা প্রকৃত মনুষ্যত্ব লাভ হয়, শৈশবেই তাহার সূত্রপাত হইয়া থাকে। এ সময়ে সাধারণতঃ শিশুর অনুসন্ধিৎসা ও অনুকরণ প্রকৃতি অতিশয় প্রবলা থাকে। শিশু ইতস্ততঃ যাহা কিছু নিরীক্ষণ করে, সে সকল তাহার নিকটে নূতন ও অপরিচিত, সুতরাং সে যাহাকে সম্মুখে পায়, তাহাকেই তৎসময়ের বিষয় জিজ্ঞাসা করে এবং সেই সমুদয় বিষয়ের বিশ্লেষণ তাহাকে যাহা বলিয়া দেওয়া হয়, তাহাই সে অভ্রান্ত সত্য বলিয়া গ্রহণ করে। ফলতঃ বাল্যকালে যাহা একবার শিক্ষা করা যায়, তাহা চিরকাল স্মৃতিপটে দেদীপ্যমান থাকে। অতএব এ সময়ে শিশুর পুরোভাগে এরপ সকল আদর্শ রাখা উচিত, যাহাতে তাহার সুকুমার মনোবৃত্তিনিচয় সজীব হয় এবং উন্নত ও পবিত্র চরিত্র লাভ করিতে তাহাকে শক্তিশালী করে; এই সময়ে হৃদয়ে জ্ঞানের যে রেখাপাত হয়, উত্তরকালে তাহাই অধিকতর রঞ্জিত ও বর্দ্ধিত হয় মাত্র। অতএব শিশু যেরূপ পরিবার মধ্যে থাকিয়া লালিত পালিত হয়, তাহার শিক্ষা ও চিত্তবৃত্তির বিকাশও যে তদনুরূপ হইবে, তদ্বিষয়ে অণুমাত্র সংশয় নাই।

 লর্ড ব্রোহাম বলেন, শিশু আঠার হইতে ত্রিশ মাসের মধ্যে বহির্জগতের বিষয়, তাহার স্বকীয় ক্ষমতা, অন্যান্য বস্তুর প্রকৃতি, এমন কি আপনার ও অপরের মন সম্বন্ধে এত অধিক শিক্ষা প্রাপ্ত হয় যে, তাহার অবশিষ্ট সমগ্র জীবনে সে আর তত শিক্ষা লাভ করে না। এই সময়ে শিশু চিরজীবনের শিক্ষার বীজ সংগ্রহ করে। সুতরাং অতি শৈশব কাল হইতেই শিশুর সুশিক্ষার বিধান করা অতীব প্রয়োজন। জনৈক মহিলা কোন্ সময়ে তাঁহার চারি বৎসর বয়ঃক্রম সন্তানের শিক্ষার সূত্রপাত করিবেন, এই কথা যেমন ধর্ম্মযাজককে জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি