পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগরের বিদ্যাশিক্ষা
৪৩

অর্থ কণ্ঠস্থ করিত, ইংরাজী ভাষায় শিক্ষিত বলিয়া তাহার তত খ্যাতি প্রতিপত্তি হইত। এরূপ শুনা যায়, শ্রীরামপুরের মিশনারিগণ সে সময়ে এই বলিয়া তাহাদের আশ্রিত ব্যক্তিদিগকে প্রশংসাপত্র দিতেন যে, এ ব্যক্তি দুই শত বা তিন শত ইংরাজী শব্দ শিখিয়াছে। এই কারণে সে সময়ে কোন কোনও বালক ইংরাজী অভিধান মুখস্থ করিত। অনেক বিদ্যালয়ে দৈনিক পাঠ সমাপ্ত হইলে, স্কুল বন্ধ হইবার পূর্ব্বে নামতা পড়াইবার ন্যায় ইংরজী শব্দ পড়ান হইত। যথা—

ফিলজফার—বিজ্ঞলোক, প্লৌম্যান—চাষ।
পমকিন—লাউ কুমড়া, কুকুম্বার—শসা।

বাক্যহীন ও ব্যাকরণহীন ইংরাজী শব্দের দ্বারা তৎকালীন ইংরাজী শিক্ষিত ব্যক্তিগণ ইংরাজগণের সহিত কথাবার্ত্তা কহিতেন। ইংরাজগণও ভাবে আকারে ইঙ্গিতে তাঁহাদের কথাবার্তা বুঝিয়া লইতেন। এবং সেই সকল প্রসঙ্গ সায়াহ্নিক ভোজের সময়ে তাঁঁহাদের আমোদ প্রমোদের বিশেষ সহায়তা করিত।

  কিছুদিন পরে ঠাকুরদাস স্থির করিলেন যে, আমাদের বংশের পুবপুরুষগণ সকলেই সংকৃত অধ্যয়ন করিয়া বিদ্যাদান করিয়াছেন। কেবল আমাকে দুভার্গ্যপ্রযুক্ত বাল্যকাল হইতে সংসার প্রতিপালন জন্য আশু অর্থকরী ইংরাজী বিদ্যাশিক্ষা করিতে হইয়াছে। ঈশ্বর সংস্কৃত অধ্যয়ন করিলে, দেশে টোল করিয়া দিব। জগদ্দুর্লভ সিংহের বাটীতে অনেক পণ্ডিত বার্ষিক আদায় করিতে আসিতেন। তন্মধ্যে পটোলডাঙ্গাস্থ গবর্ণমেণ্ট সংস্কৃত কলেজের ব্যাকরণের ৩য় শ্রেণীর পণ্ডিত গঙ্গাধর তকবাগীশ মহাশয়ের সহিত ঠাকুরদাসের আলাপ ছিল। তাঁহাকে পরামর্শ জিজ্ঞাসা করায়, তিনি উপদেশ দিলেন যে, কলেজে প্রবিষ্ট করিয়া দিলে ৫।৬ মাস পরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলে, আপাততঃ মাসে মাসে ৫ টাকা বৃত্তি পাইবে। দেশের টোলে পড়িতে দিলে সংক্ষিপ্তসার অধ্যয়ন করিতে দীর্ঘকাল লাগিবে। কলেজে মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ অধ্যয়ন করিয়া ৩ বৎসরের মধ্যে ব্যাকরণে বুৎপত্তি জন্মিলে, কাব্যের শ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইতে পারিবে। দ্বিতীয়তঃ তৎকালে পাতুলগ্রামনিবাসী রাধামোহন বিদ্যাভূষণের পিতৃব্যপত্র মধুসদন বাচস্পতি, সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়ন করিতেন এবং বৃত্তি পাইতেন। ঠাকুরদাস উক্ত বাচস্পতিকে পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিলে তিনিও পরামর্শ দেন যে, “ঈশ্বরকে সংস্কৃত কলেজে ভত্তি করিয়া দাও।”

 জগদ্দুর্লভ সিংহের ভগিনী রাইমণি দাসী ও তাঁহার পরিবারগণ বিদ্যাসাগর মহাশয়কে অতি শিশু দেখিয়া, অত্যন্ত ভাল বাসিতেন। ঠাকুরদাস চাকুরী উপলক্ষ্যে প্রাতঃকাল হইতে বেলা ৯টা পর্যন্ত কার্যসমাধা করিয়া বাসায় প্রত্যাবৃত্ত হইতেন। পরে পাকাদি কার্য্য সম্পন্ন করিয়া পিতাপুত্রে ভোজন করিতেন। কম্বল হইতে বাসায় আসিয়া রাত্রি দশটার সময় পুনর্বার পাকাদি কার্য্য সমাধা করিয়া, ভেজনান্তে উভয়ই নিদ্রা যাইতেন। প্রাতঃকাল হইতে অষ্টমবর্ষীয় বালক