পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
ভগবতী দেবী

তিনি আর কালক্ষয় না করিয়া পরদিবসই বিদ্যালয়ের স্থান নিরূপিত করিলেন। ভূস্বামী রামধন চক্রবর্ত্তী প্রভৃতিকে মুল্য দিয়া ভূমিবিক্রয়ের কোবালা পত্র লিখাইয়া লইলেন। ইহার পর দিবস মজুর পাওয়া যায় নাই দেখিয়া, বিদ্যাসাগর স্বয়ং কোদাল লইয়া ভ্রাতৃবর্গের সহিত মাটী খনন করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। পরে বিদ্যালয় গৃহ শীঘ্র নির্ম্মাণ জন্য পিতৃদেবকে সহস্রাধিক মুদ্রা দিয়া কলিকাতায় গমন করিলেন।

 ১৮৫৩ খৃঃ অব্দে গ্রীষ্মাবকাশের পূর্ব্বে চৈত্রমাসে মধ্যম ও তৃতীয় সহোদর ও তৎকালীন বাসায় যে যে আত্মীয় সংস্কৃত কলেজের উচ্চ শ্রেণীতে অধ্যয়ন করিতেন, তাঁহাদিগকে দেশস্থ বালকগণের শিক্ষাকার্য্য সম্পাদনার্থে নিযুক্ত করিয়া পাঠাইলেন। বিদ্যালয় প্রস্তুত হইতে আরও ৪ মাস সময় অতিবাহিত হইবে, একারণ দেশস্থ স্বীয় বাসভবনে ও সন্নিহিত প্রতিবেশী লোকের ভবনে ফাল্গুন মাসে বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ইতিপূর্ব্বে এ প্রদেশে কোনও স্কুল স্থাপিত হয় নাই। স্থানীয় অনেকের সংস্কার ছিল, স্কুলে অধ্যয়ন করিলে খৃষ্টান হইয়া যায়। কেহ কেহ বলিতেন, ছেলেরা নাস্তিক হইবে। কোন কোন ভট্টাচার্য্যের সংস্কার ছিল জাতিভ্রংশ হইবে, ইত্যাদি কত লোকে কত কথাই প্রকাশ করিতেন। তৎকালে বীরসিংহবাসী লোকদিগের অবস্থা অত্যন্ত মন্দ ছিল। সদ্‌গোপেরা কৃষিকর্ম্ম করিয়া দিনপাত করিত। ইহাদের সন্তানগণ গরু চরাইত; কেহ কেহ অন্যের ক্ষেত্রে মজুরি করিয়া দিনপাত করিত। অনেকের দিনান্তে অন্নসংস্থান দুষ্কর হইত। যাহা হউক, বিদ্যালয় স্থাপন করিবামাত্র ৫।৭ দিনের মধ্যেই প্রায় শতাধিক বালক অধ্যয়নার্থ প্রবিষ্ট হইল। ক্রমশঃ সন্নিহিত পাথরা, উদয়গঞ্জ, কুরাণ, গোপীনাথপুর, যদুপুর, দণ্ডীপুর, ঈরপালা, পুড়শুড়ী, মামরুল, আকপপুর, আগর, রাধানগর, ক্ষীরপাই প্রভৃতি গ্রাম হইতে যথেষ্ট বালক বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইতে লাগিল। পাঠ্যপুস্তক ক্রয় করে, অনেকেরই এমন সঙ্গতি ছিল না। বিদ্যালয় অবৈতনিক হইল। বিদ্যাসাগর, কলিকাতা হইতে প্রায় ৩০০ তিন শতের অধিক বালকের জন্য পাঠ্যপুস্তক এবং কাগজ, শ্লেট প্রভৃতি অকাতরে প্রেরণ করিলেন। গ্রামের যে যে ছাত্রের বস্ত্রাভাব ছিল, তাহাদিগকে বস্ত্র ক্রয় করিয়া দিবার জন্য, শম্ভুবাবুকে আদেশ দিলেন। ঐ সময়ে বিদেশস্থ অনেক অধ্যাপকের পুত্র, অধ্যয়ন মানসে বীরসিংহে সমাগত হইল।

 যাহারা অন্যের বাটিতে বেতন গ্রহণ করিয়া দিবসে গরু চরাইত, বা যাহারা দিবসে কৃষিকর্ম্ম করিত, তাহাদের লেখাপড়া শিক্ষার জন্য বিদ্যাসাগর নাইট স্কুল স্থাপন করিলেন। ঐ স্কুলে সন্ধ্যার পর রাত্রি দুই প্রহর পর্য্যন্ত দুইজন শিক্ষক নিযুক্ত ছিলেন। বিনামূল্যে পুস্তক বিতরিত হইত। এই সকল বিষয়ে যাহা ব্যয় হইত, তাহা বিদাসাগর স্বয়ং বহন করিতেন।

 বিদ্যাসাগর একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করিলেন। সকলেই বিনামূল্যে