বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
ভগবতী দেবী

 গবর্ণমেণ্ট অন্নসত্রে দরিদ্রদিগকে কর্ম্ম করাইয়া খাইতে দিতেন; এজন্য কতকগুলি লোক কর্ম্ম করিবার ভয়ে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অন্নসত্রে ভোজন করিতে আসিত। তজ্জন্য ক্রমশঃ লোকসংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল। এখানে পীড়িতদিগের চিকিৎসা হইত, এবং রোগীদিগের পথ্যের স্বতন্ত্র ব্যবস্থা ছিল। গ্রামস্থ ভদ্রলোকের মধ্যে যাহাদের অবস্থা অতি মন্দ, তাহাদিগকে প্রত্যহ প্রাতে বেলা ৯ ঘটিকা পর্যন্ত আহার্য্য দেওয়া হইত। এতদ্ব্যতীত প্রায় ২০টি পরিবার প্রত্যহ আহার্য্য লইতে লজ্জিত হইতেন; তন্নিমিত্ত তাঁহাদিগকে গোপনে নগদ টাকা দেওয়া হইত। খাতায় নাম লেখা ব্যতীত আরও ২৫|২৬টি গৃহস্থ রাত্রিতে গোপনে চাউল, ডাইল ও লবণ লইয়া যাইতেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়, খাতায় ইঁহাদের নাম লিখিতে বারণ করিয়া দেন। যে যে ভদ্রপরিবারের বস্ত্র ছিল না, তাহারা প্রকাশ্যে বস্ত্র লইতে লজ্জিত হইবেন, একারণ প্রায় দুই সহস্র টাকার বস্ত্র গোপনে বিতরিত হয়। সন্ধ্যার পর বিদ্যাসাগর স্বয়ং বস্ত্র লইয়া মোটা চাদর গাত্রে দিয়া বস্ত্র বিতরণ করিবার জন্য অনেক ভদ্রলোকের বাটীতে গমন করিতেন এবং বলিতেন, “ইহা কাহারও নিকট বলিবার আবশ্যক নাই।” তিনি ভদ্রলোকদিগকে অতি গোপনে দান করিতেন।


নবম পরিচ্ছেদ॥ ধৈর্য্য ও সৎসাহস

 জন্মগ্রহণ করিলেই মনুষ্যকে বিপদ, কষ্ট, অভাব, যন্ত্রণা ও হানি সহ্য করিতে হয়। অতএব সাহস ও ধৈর্য্য দ্বারা চিত্তকে দৃঢ়ীভূত করা মানবমাত্ররই অবশ্যকর্ত্তব্য। কারণ, তাহা হইলে দুঃখের অংশ বহন করা সহজসাধ্য হইয়া মরুভূমির মধ্যে উষ্ট্র যেমন শ্রম, তাপ, ক্ষুধা ও পিপাসা সহ্য করে, কাতর হয় না; ধৈর্য্যশালী ব্যক্তিও সেইরূপ বিষাদ এবং কষ্টে পতিত হইয়াও সৎসাহসেরই পরিচয় প্রদান করিয়া থাকেন। উন্নতমনা, ওজস্বী ব্যক্তি অদৃষ্টের প্রতিকূলতাকে অবজ্ঞা করেন; তাঁহার মনোমাহাত্ম্য কিছুতেই খর্ব্ব হইবার নহে। তিনি সাগরশৈলের ন্যায় সংসার-জলধির বক্ষে অবস্থিতি করেন; বিপদরূপ তরঙ্গের আঘাতে তাঁহাকে বিচলিত করিতে পারে না। বিপদের সময় সাহস তাঁহার অন্তঃকরণে বলের সঞ্চার করে এবং তাঁহার চিত্তস্থৈর্য্য তাঁহাকে বহন করিয়া তাঁহার উদ্ধারসাধন করে। রণোন্মুখ সৈনিকের ন্যায় তিনি বিপদের সম্মুখীন হন, এবং হস্তে বিজয়লাভ করিয়া প্রত্যাগমন করেন।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় যখন সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল এবং তাঁহার পুস্তকের দ্বারা অর্থাগমের যথেষ্ট সুবিধা হইয়াছিল, তখন তিনি দেশে আগমন করিলে, বীরসিংহ ও নিকটবরর্ত্তী গ্রামের দীন দরিদ্র অবস্থাহীন ব্যক্তিবর্গকে আপনার সাধ্যমত অর্থসাহায্য করিতেন। সন্ধ্যার পর তিনি চাদরে টাকা বাঁধিয়া, লোকের গৃহে