পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহত্ত্ব ও মিতাচার
৮৩

দশজনকে ষোড়শোপচারে ভোজন করান অপেক্ষা, সেই ব্যয়ে বিংশতি জনকে অন্নদান করিতে পারিলে, অন্নদানের সদ্ব্যবহার হইবে। সুতরাং সামান্য গৃহস্থ গৃহে যেরূপ আহারাদির ব্যবস্থা হওয়া সম্ভব, তিনি কখনই অতিরিক্ত আয়োজন করিতে প্রয়াস পান নাই।

 মধ্যাহ্নে ও সায়াহ্নে প্রায় শতাধিক লোক গৃহে ভোজন করিত। ইহাদিগের আহার্য্য রন্ধন ও পরিবেশনাদি ব্যাপারে পাচকাদি নিয়োগ বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাচারিণী ছিলেন। তিনি মনে করিতেন, ঐরূপ বাবস্থা করিলে যে অর্থব্যয় হইবে, তদ্বারা তিনি আরও কয়েকজনকে অন্নদান করিতে পারিবেন। এইজন্য তিনি স্বয়ং রন্ধন ও পরিবেশনাদি করিতেন। পরিবারস্থ সকলে তাহার সাহায্য করিতেন মাত্র।

 পরিবারস্থ জনগণের বিলাসিতা ও সুুখস্বচ্ছন্দতার জন্য অধিক ব্যয় করা তাঁহার প্রকৃতিবিরুদ্ধ ছিল। তিনি তদ্বিনিময়ে অপরের সুখবিধান করিতে পারিলেই আপনাকে কৃতার্থ মনে করতেন। তিনি স্বয়ং চরকায় সুতা কাটিয়া তদ্বারা মোটা বস্ত্র প্রস্তুত করাইয়া পরিবারস্থ সকলের পরিধানের নিমিত্ত দিতেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় কোন সময়ে কলিকাতা হইতে সূক্ষ্ম বস্ত্র পাঠাইয়া দিলে, তিনি তাহা অপরকে বিতরণ করিতেন। আমরা পূর্ব্বেই উল্লেখ করিয়াছি, তিনি অলঙ্কারাদির সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন। তিনি বলিতেন, ‘অলঙ্কারাদি ব্যবহার করিলে পরিবারস্থ স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে বিলাসিতা বৃদ্ধি পাইবে, গহস্থালীতে তাহাদের আর সেরূপ মন থাকিবে না। বাটীতে দস্যুু তস্করের ভয় হইবে। যে অর্থে অলঙ্কারাদি প্রস্তুত করাইব, সেই ব্যয়ে আমি দশজনকে অন্নদান করিতে পারিব।”

 “দ্রব্যের অপচয় সম্পত্তিসঞ্চয়ের বিরোধী, সকল দ্রব্য হইতেই কোন না কোন প্রয়োজন সাধিত হইতে পারে, এইজন্য তিনি অতি সামান্য দ্রব্যও সযত্নে রক্ষা করিতেন। গৃৃহসামগ্রীসকল বিশৃঙ্খল করিয়া রাখা সম্পত্তিরক্ষা ও সম্পত্তিবৃদ্ধির প্রতিকূল; গৃহ এবং গৃহস্থিত দব্যাদি শীঘ্র বিনষ্ট হইতে দিলে সত্বরই ধনক্ষয় হয়, এইজন তিনি সর্ব্বাগ্রে গৃহের যাবতীয় বিষয়ের শঙ্খলা স্থাপন করিতেন, —ভগবতী দেবীর পারিবারিক জীবনে এ কথা আমরা পূর্ব্বেই উল্লেখ করিয়াছি। ছিন্ন বস্ত্র, এক গাছি রজ্জু, ভগ্ন মৃৃন্ময় পাত্র, একগাছি তৃণ পর্যন্তও তিনি সযত্নে রক্ষা করিতেন। তিনি সর্ব্বদাই বলিতেন, “যাকে রাখ সেই রাখে।” ফলতঃ মিতাচারের এই নীতিসূত্র আমরা প্রত্যেক মহতী নারীর জীবনেই দেখিতে পাই। পুণ্যবতী, করুণার মুর্ত্তি, মহারাণী ভিক্টোরিয়ার জীবনেও আমরা এই নীতিসূত্রের পরিচয় প্রাপ্ত হইয়া থাকি। সামান্য দ্রব্যটি পর্যন্ত মহারাণী অতিশয় যত্ন সহকারে রক্ষা করিতেন। তাঁহার নিকট নানাস্থান হইতে নানাপ্রকার উপহার প্রেরিত হইত। ঐ সকল উপহার উৎকৃষ্ট ফিতা বা সূতা দ্বারা বাঁধা থাকিত। মহারাণী ঐ সকল