বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
ভগবতী দেবী

উপস্থিত হন, তখন তাঁহারও এই অবস্থা! চতুর্দিক ঘন ঘটায় আচ্ছন্ন-মুহমুর্হু মেঘগর্জ্জন-মুষলধারে বারিবর্ষণ—কালিন্দীর প্রবল জলোচ্ছ্বাস! পত্রবৎসল পিতা পরপারে উত্তীণ হইবার মানসে কালিন্দীর প্রবল জলস্রোতে বাহ্যজ্ঞানশুন্য হইয়া ঝাঁপ দিলেন। প্রেমভক্তির পরীক্ষার শেষ হইল! বসুদেব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলেন। আধ্যাত্মিক জগতে উভয় ব্যাপারই একরপ! একপক্ষে প্রেমের পরীক্ষা!—অপর পক্ষে ভক্তির পরীক্ষা! কিন্তু ভক্তি, প্রেম, প্রণয়, স্নেহাদি সকলই সেই এক অনুরাগ মহোদধিরই ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ মাত্র! সেইজন্য মনে হয়, ইহা দামোদরের জলোচ্ছ্বাস নহে!—ইহা প্রেমভক্তির কঠোর পরীক্ষা! মাতৃভক্ত বীর বিদ্যাসাগর কঠোর পরীক্ষায় উত্তীণ হইবার জন্য বাহ্যজ্ঞানশূন্য হইয়া মাতৃপদ স্মরণ করিতে করিতে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে যখন ঝাঁপ দিলেন, তখনই মাতৃরূপিণী আদ্যাশক্তি তাঁহাকে বক্ষে করিয়া পরপারে উত্তীর্ণ হইলেন। ভক্ত জীবনের পরীক্ষাই এইরপ! সষ্টির বিনাশ আছে—কিন্তু ভক্তের বিনাশ নাই! ভক্তের রক্ষার জন্য ভগবানের সুকোমল পবিত্র হস্ত সর্ব্বস্থানে সতত প্রসারিত! ভক্ত,—অক্ষয় অব্যয়-অবিনবর!

 পাঠকগণ! একবার হৃদয়ে উপদ্ধি করুন, স্নেহ ভক্তির কিরূপ সন্নিপাতে, কিরূপ বিনিময়ে এরূপ মাতৃভক্ত বীর সন্তানের সষ্টি হইতে পারে! ধন্য সন্তানবাৎসল্য! ভগবতী দেবী, তোমার সমস্তই বিচিত্র! তোমার তুলনা একমাত্র তোমাতেই সম্ভবে!


ষোড়শ পরিচ্ছেদ॥ নৈতিক বাধ্যতা বা কর্ত্তব্যবুদ্ধি

 বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অন্তঃকরণ স্বতঃই হিন্দু, বালবিধবাদিগের দুঃখে বিগলিত হইত। কোন বালিকা বিধবা হইয়াছে শ্রবণ করিলে, বিদ্যাসাগর হৃদয়ের আবেগ কিছুতেই সম্বরণ করিতে পারিতেন না, উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিয়া উঠিতেন। তিনি বাল্যকাল হইতেই বিধবা-বিবাহ প্রচলনের পক্ষপাতী ছিলেন। কালসহকারে বিদ্যাসাগর বুঝিতে পারিলেন, শাস্ত্রপ্রমাণ ব্যতীত বিধবাবিবাহ প্রচলন করা দুরূহ। সুতরাং তিনি শাস্ত্রপ্রমাণ সংগ্রহে প্রবৃত্ত হইলেন। শাস্ত্রানুসারে বিধবাবিবাহের শাস্ত্রীয়তা সপ্রমাণ করা বিদ্যাসাগরের উদ্দেশ্য হইলেও প্রথমতঃ তিনি শাস্ত্রীয় প্রমাণ সংগ্রহ করিয়া উঠিতে পারেন নাই। পরে একদিন রজনী যোগে একখানি পুঁথি পাঠ করিতে করিতে তিনি হঠাৎ আনন্দবেগে উঠিয়া বলিলেন,—“পাইয়াছি, পাইয়াছি।” উপস্থিত সকলে জিজ্ঞাসা করিলেন, কি পাইয়াছেন? তখন তিনি পরাশরসংহিতার সেই শ্লোকটি আবৃত্তি করিলেন:—