পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চাকরী।
১০০

সমুপস্থিত হইয়া, পিতৃদেব মহাশয়কে বলেন যে, “আপনি দেশে টোল করিয়া দেশস্থ লোককে বিদ্যাদান করিবেন, ইহা বহুদিন পূর্ব্বে মধ্যে মধ্যে প্রায় ব্যক্ত করিতেন; এক্ষণে মহাশয়ের আশীর্বাদপ্রভাবে অবস্থা ভাল হইয়াছে, অতএব আমি বীরসিংহায় একটী বিদ্যালয় স্থাপন করিতে মানস করিয়াছি।” ইহা শ্রবণ করিয়া, জননী-দেবী ও পিতৃদেব মহাশয় পরম আহ্লাদিত হইয়া, দাদার মুখচুম্বন করিয়া আহ্লাদ প্রকাশ করিলেন। পরদিন বিদ্যালয়ের স্থান নিরূপণ হইল। ভূস্বামী রামধনচক্রবর্তী প্রভৃতিকে মূল্য দিয়া ভূমিবিক্রয়ের কোবালাপত্র লিখাইয়া লইলেন। ইহার পরদিবস মঞ্জুর পাওয়া যায় নাই দেখিয়া, দাদা স্বয়ং কোদালগ্রহণপূর্ব্বক ভ্রাতৃবর্গসহ মাটী খনন করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। পরে বিদ্যালয়গৃহ শীঘ্র নির্ম্মাণজন্য, পিতৃদেবকে সহস্রাধিক মুদ্রা দিয়া কলিকাতায় গমন করিলেন।

 ১৮৫৩ খৃঃ অব্দে গ্রীষ্মবকাশের পূর্বে চৈত্রমাসে, মধ্যম ও তৃতীয় সহোদর ও তৎকালীন বাসার যে যে আত্মীয় সংস্কৃত-কলেজের উচ্চ-শ্রেণীতে অধ্যয়ন করিত, তাহাদিগকে দেশস্থ বালকগণের শিক্ষাকার্য্য় সম্পাদনার্থে নিযুক্ত করিয়া পাঠাইলেন। বিদ্যাভবন প্রস্তুত হইতে আরও চারি মাস সময় অতিবাহিত হইবে, একারণ, দেশস্থ স্বীয় বাসভবনে ও সন্নিহিত প্রতিবেশীলোকের ভবনে, ফাঙ্কনমাসে বীরসিংহগ্রামে বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ইতিপূর্বে এ প্রদেশে কোনও স্কুল স্থাপিত হয় নাই। স্থানীয় অনেকের সংস্কার ছিল, স্কুলে অধ্যয়ন করিলে খৃষ্টান হইয়া থাকে। কেহ কেহ বলিতেন, ছেলেরা নাস্তিক হইবে। কোন কোন ভট্টাচার্য্য়ের সংস্কার ছিল, জাতিভ্রংশ হইবে; ইত্যাদি কত লোকে কত কথাই প্রকাশ করিতে লাগিল। তৎকালে বীরসিংহবাসী লোকদিগের অবস্থা অত্যন্ত মন্দ ছিল। সদ্‌গোপেরা কৃষিকর্ম্ম করিয়া দিনপাত করিত। ইহাদের সন্তানগণ গরু চরাইত; কেহ কেহ অন্যের ক্ষেত্রে মজুরি করিয়া দিনপাত করিত। অনেকের দিনান্তে অন্ন জুটা দুষ্কর হইত। যাহা হউক, বিদ্যালয় স্থাপন করিবামাত্র ৫|৭ দিনের মধ্যেই