পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

দিগকে একত্র বসাইয়া আহার করাইতেন। জননীদেবী সন্তুষ্টা হইয়া, নিজেই রন্ধন-পরিবেশনাদি কার্য্য়ে সমভাবে পাচক ও পাচিকাদিগের সাহায্য করিতেন। ঐ সময় অগ্রজ মহাশয়, প্রতিবৎসর বীরসিংহবিদ্যালয়ের ৭|৮ জন দরিদ্র বালককে কলিকাতায় লইয়া যাইতেন এবং উহাদিগকে বাসায় অন্ন-বস্ত্র দিয়া, কাহাকেও সংস্কৃত-কলেজে, কাহাকেও মেডিকেল কলেজে এবং কাহাকেও বা ইংরাজী স্কুলে অধ্যয়ন করাইতেন। কয়েক বৎসরের মধ্যে বীরসিংহবিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্র মেডিকেল কলেজে অধ্যয়ন করে। এইরূপ প্রতি বৎসর ৮|১০ জন ছাত্র কলিকাতার বাসায় ভোজন করিয়া, নরম্যালস্কুলে অধ্যয়ন-পূর্ব্বক অন্যান্য মফঃস্বল-বিদ্যালয়ের শিক্ষক হইয়াছিলেন।

 তৎকালের শিক্ষাসমাজের অধ্যক্ষ ডাক্তার ময়েট্‌ মহোদয়, বেথুন সাহেবের স্মরণার্থ বীটনসোসাইটি নামক সমাজ স্থাপন করেন। ঐ সমাজে বিদ্যাসাগররচিত সংস্কৃত-সাহিত্য-বিষয়ক প্রস্তাব পঠিত হয়। অনেকের অনুরোধে অগ্রজ মহাশয়, সভাপতির অনুমতি লইয়া, উক্ত প্রস্তাব পুস্তকাকারে মুদ্রিত করেন।

 বাল্যকাল হইতে ৩০ বৎসর বয়ঃক্রম পর্য্যন্ত অগ্রজ মহাশয়কে কখনও তামাক খাইতে দেখি নাই; পরে তামাক খাইতে আরম্ভ করেন। প্রথমতঃ বাসায় কাহারও নিকট খাইতেন না, গোপনে অপরের বাটীতে খাইতেন। তামাক খাইবার বিশেষ কারণ এই যে, রাত্রিজাগরণ করিয়া লেখাপড়ার অনুশীলন করিতেন, তজ্জন্য দাঁতের গোড়া ফুলিত। তৎকারণেই বাবু দুর্গাচরণ বন্দোপাধ্যায় ডাক্তার মহাশয়, সর্ব্বদা উপদেশ দিতেন যে, তামাকের ধূমে দন্তমূলের যাতনার অনেক লাঘব হইবে। একারণ, অগত্যা ডাক্তারের উপদেশানুসারে তামাক খাইতে বাধ্য হইয়াছিলেন। কিন্তু তৎকালে বাটী আগমন করিয়া ১৫ দিবস অবস্থিতি করিলেও আমরা কখনও তাঁহাকে তামাক খাইতে দেখি নাই। ছোট ঘোট ভ্রাতৃবর্গ প্রভৃতি কেহই না দেখিতে পায়, এরূপ গোপনভাবে তিনি তামাক খাইতেন।

 বাল্যকালে বড়বাজারের দোয়েহাটানিবাসী জগদ্দুর্লভ সিংহের ভবনে