পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিধবাবিবাহ।

 অগ্রজ মহাশয়, শৈশবকাল হইতে পুরুষ-জাতি অপেক্ষা স্ত্রী-জাতির দুঃখ-দর্শনে অতিশয় দুঃখানুভব করিতেন। তিনি, কি আত্মীয়, কি অনাত্মীয়, কি নিকৃষ্ট জাতি, কি ভদ্রজাতি, নিরুপায় পতিপুত্রবিহীনা স্ত্রীলোকদিগের আনুকুল্য করিতে কখন ত্রুটি করেন নাই। পুরুষ-জাতি অপেক্ষা স্ত্রী-জাতি স্বাভাবিক দুর্ব্বল, এই কারণে তিনি স্ত্রী জাতির সমধিক পক্ষপাতী ছিলেন।

 এক দিবস বীরসিংহ-বাটীর চণ্ডীমণ্ডপে উপবিষ্ট হইয়া, অগ্রজ, পিতৃদেবের সহিত বীরসিংহার বিদ্যালয়গুলির সম্বন্ধে কথোপকথন করিতেছিলেন, এমন সময়ে জননী-দেবী রোদন করিতে করিতে চণ্ডীমণ্ডপে আসিয়া, একটি বালিকার বৈধব্যসংঘটনের উল্লেখকরতঃ দাদাকে বলিলেন, “তুই এত দিন যে শাস্ত্র পড়িলি, তাহাতে বিধবাদের কোনও উপায় আছে কি না?” ইহা শুনিয়া পিতৃদেব বলিলেন, “ঈশ্বর! ধর্ম্মশাস্ত্রে বিধবাদের প্রতি শাস্ত্রকারের কি কি ব্যবস্থা করিয়াছেন?” দাদা উত্তর করিলেন, “শাস্ত্রে বিধবাদিগের প্রথমতঃ ব্রহ্মচর্য্য়, ব্রহ্মচর্য্য়ে অপারক হইলে, সহমরণ বা বিবাহ।” ইহা শুনিয়া পিতৃদেব বলিলেন, “রাজা রামমোহন রায়, কালীনারায়ণ চৌধুরী ও দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রভৃতির যোগাড়ে ও পরামর্শে, গবর্ণর জেনেরেল লর্ড বেণ্টিঙ্ক সহমরণ-প্রথা নিবারণ করিয়াছেন। আর কলিতে ব্রহ্মচর্য্য়ে অপারক; সুতরাং বিধবাদিগের পক্ষে বিবাহই একমাত্র উপায়।” ইহা শুনিয়া দাদা বলিলেন, “বেদ, স্মৃতি, পুরাণ পাঠ করিয়া অনেক দিন হইতে আমার ধারণা হইয়াছে যে, বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসিদ্ধ; ইহাতে আমার অণুমাত্র সন্দেহ নাই, এবং ইহা সাধারণের হৃদয়ঙ্গম হইবে। কিন্তু এ বিষয়ের পুস্তক প্রচার করিলে, অনেকে নানাপ্রকার কুৎসা ও কটুকাটব্য প্রয়োগ করিবে। তাহাতে পাছে আপনারা দুঃখিত হন, এই আশঙ্কায় আমি নিবৃত্ত আছি।” এই কথা শুনিয়া তাঁহারা