পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিধবাবিবাহ।
১১৭

বলিলেন, “আমরা উভয়ে একবাক্যে বলিতেছি, এ বিষয়ে যাহা কিছু সহ্য করিতে হয়, তাহা করিব এবং আমাদিগকে যখন যাহা করিতে হইবে, তাহা সাধ্যমতে ত্রুটি করিব না। কিন্তু তুমি পুস্তক প্রচার করিবার অগ্রে আর একবার ধর্ম্মশাস্ত্র ভাল করিয়া দেখিয়া প্রবৃত্ত হইবে। প্রবৃত্ত হইবার পর কিছুতেই পশ্চাৎপদ হইবে না; এমন কি, আমরা তোমার পিতা মাতা, আমরা নিবারণ করিলেও ক্ষান্ত থাকিবে না।”

 বিধবাবিবাহ প্রস্তাবের বহুকাল পূর্ব্ব হইতে, অনেক ধনশালী লোক বালিকাবিধবার বিবাহ দেওয়া সর্ব্বতোভাবে কর্ত্তব্য, এতদ্বিষয়ে আন্দোলন করিয়া আসিতেছিলেন; কিন্তু অনেক ধনশালী ব্যক্তির (রাজা রাজবল্লভ প্রভৃতির) আন্তরিক যত্ন থাকিলেও, এ বিষয়ে সাহস করিতে পারেন নাই। অগ্রজের উক্ত প্রস্তাবের দশ বৎসর পূর্ব্বে, বহুবাজারনিবাসী বাবু নীলকমল বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, স্বীয় ভবনে কতকগুলি আত্মীয় লোককে ঐক্য করিয়া, বিধবাবিবাহ দিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিলেন। এরূপ অপরাপর দেশেও অনেকেই বালবিধবা দেখিয়া, দুঃখানুভব করতঃ তাহাদের বিবাহ দিতে সম্মত ছিলেন; কিন্তু সমাজের ভয়ে অগ্রে প্রবৃত্ত হইতে কাহারও সাহস হয় নাই।

 কোন কোন ধনশালী লোকের প্রাণসমা কন্যা বিধবা হইলে প্রচার করিতেন যে, বিধবাবিবাহ যিনি প্রচলিত করিতে পারিবেন, তাঁহাকে ব্যয়-নির্বাহার্থে লক্ষ টাকা পুরস্কার প্রদান করিব। যৎকালে কন্যার বৈধব্য সংঘটন হয়, তৎকালেই দিন-কয়েকের জন্য লোকের মানসিক দুঃখ উপস্থিত হয় যে, একাদশীর দিবস বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড দিনকরের উত্তাপে বালিকা কন্যা শুষ্ককণ্ঠ হইয়া জলপান না করিয়া কেমন করিয়া প্রাণধারণ করিবে। কন্যার এরূপ অসহ্য কষ্ট দেখা অপেক্ষা আমাদের মৃত্যু হওয়া শ্রেয়ঃ। কিছু দিন অতীত হইলে, ঐ কন্যার জনক-জননীর আর ঐরূপ দুর্ভাবনা থাকে না। পরে যৌবনাবস্থায় সমুপস্থিতা হইয়া প্রাকৃতিক নিয়মের বশীভূত হইয়া কার্য্য করিলে, পিতামাতা দেখিয়াও দেখেন না। জণহত্যাদিতেও পরাঙ্মুখ হন না। পুরুষজাতির