পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিধবাবিবাহ।
১১৯

ব্রজনাথ বিদ্যারত্নের সহিত বিচার করেন এবং বিচারে জয়ী হইয়া, একজোড়া শাল পুরস্কার প্রাপ্ত হন। একজন পরিশ্রম করিয়া ব্যবস্থার সৃষ্টি করিয়াছিলেন, আর একজন বিরোধী-পক্ষের সহিত বিচার করিয়া ঐ ব্যবস্থার প্রামাণ্য রক্ষা করিয়াছিলেন। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, কিয়দ্দিবস অতীত হইলে ইহাঁরা উভয়েই বিধবাবিবাহ অশাস্ত্রীয় বলিয়া, সর্ব্বাপেক্ষা অধিক বিদ্বেষ প্রদর্শন করিয়াছিলেন। শ্যামাচরণ দাস বিষয়ী লোক, কিন্তু সংস্কৃত-ভাষায় অনভিজ্ঞ ছিলেন। পণ্ডিত মহাশয়দের কথার স্থিরতা নাই দেখিয়া, স্তব্ধ হইয়া রহিলেন। বস্তুতঃ উল্লিখিত বিচার দ্বারা উপস্থিত বিষয়ের কিছুমাত্র মীমাংসা হইল না, তথাপি ঐ বিচার দ্বারা এই এক মহৎ ফল দর্শিয়াছিল যে, তদবধি অনেকেই এ বিষয়ের নিগুঢ়-তত্ত্ব জানিবার নিমিত্ত অত্যন্ত ব্যগ্র হইয়াছিলেন।

 জনক-জননীর ঐ সম্বন্ধের কথোপকথনগুলি হৃদয়ে জাগরূক থাকায়, অগ্রজ মহাশয়, সবিশেষ যত্ন সহকারে এ বিষয়ের তত্ত্বানুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, এবং কয়েক মাস দিবারাত্র পরিশ্রম-সহকারে সমস্ত ধর্ম্মশাস্ত্র আদ্যোপান্ত অবলোকন করিয়া, যথাসাধ্য চেষ্টাকরতঃ সাধারণের গোচরার্থে খৃঃ ১৮৫৫ সালে বা সম্বৎ ১৯১২ সালের কার্ত্তিক মাসে বঙ্গ-ভাষায় অনুবাদসহ বিধবাবিবাহের ব্যবস্থা-পুস্তক প্রচার করেন। ইহা মুদ্রিত হইবার পর,‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না? সমস্ত ভারতবর্ষে এ বিষয়ের আন্দোলন চলিতে লাগিল; বঙ্গদেশের অনেকেই নানাপ্রকার কুৎসা ও গালি দিতে লাগিল। এই সময়ে পিতৃদেব, কলিকাতায় বহুবাজারস্থ পঞ্চাননতলার বাসায় একদিন ডাক্তার নবীনচন্দ্র মিত্র ও অগ্রজের সহিত কথোপকথনে হাস্য-বদনে বলিলেন, “ঈশ্বর! আর তোমাকে আমার শ্রাদ্ধ করিতে হইবে না।” ইহা শুনিয়া অগ্রজ সহাস্যমুখে বলিলেন, “খরেদরে এক হাঁটু,” (ইহার অর্থ এই যে, যেমন সামান্য লোকে নানাপ্রকার গালাগালি করিবে, তেমনই বিজ্ঞ ব্যক্তিরা সমস্ত পর্য্যালোচনা করিয়া, মানসিক সন্তোষ লাভ করিবেন এবং বিধবারা বৈধব্য-যন্ত্রণা হইতে মুক্তিলাভ করিয়া, সুখে সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ