পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিধবাবিবাহ।
১২৩

তুলিয়াছিল। ঐ বস্ত্র অনেকেই আগ্রহাতিশয়ের, সহিত অধিক মূল্য দিয়া ক্রয় করিত। অনেকেই বিদ্যাসাগর মহাশয়কে দেখিতে আসিত। যখন তিনি পদব্রজে পথে যাইতেন, অনেক স্ত্রীলোক একদৃষ্টিতে তাঁহাকে অবলোকন করিত। কারণ, এতাবৎ দীর্ঘকালের মধ্যে ভারতবর্ষে অনেক ধনী ও গুণী লোক জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, কিন্তু হতভাগিনী বিধবা স্ত্রীলোেকদের প্রতি কেহ কখন বিদ্যাসাগরের মত দয়া প্রকাশ করেন নাই। যিনি যতই প্রকাশ্যে বিধবাবিবাহের বিদ্বেষ্টা হউন না কেন, কিন্তু মনে মনে বলিতেন যে, বিদ্যাসাগর মহাশয় বিধবা-বিবাহের প্রচলনের ব্যবস্থা করিয়া ভালই করিয়াছেন। তিনি অন্ততঃ একটী বিধবার বিবাহ দিতে পারিলে, অনন্তকালব্যাপিনী কীর্ত্তি রাখিয়া যাইবেন, তাহার সন্দেহ নাই।

 এস্থলে কৃষ্ণনগরনিবাসী বাবু বিষ্ণুচন্দ্র বিশ্বাসের অনুরোধে, তাহার বিবরণটি নিম্নে প্রকাশ কর গেল।

 বিদ্যাসাগর মহাশয়, কৃষ্ণনগরের লোকদিগকে অতিশয় ভাল বাসিতেন ও অনেকের যথেষ্ট উপকার করিয়াছিলেন। কৃষ্ণনগরনিবাসী বাবু বিষ্ণুচন্দ্র বিশ্বাস, কৃষ্ণনগর কলেজে অধ্যয়নের মানস করিয়াছিলেন। কিন্তু কলেজের বেতনের অসদ্ভাবপ্রযুক্ত লেখাপড়া শিক্ষা করিতে অক্ষম হইয়া, স্থানীয় অন্যান্য লোকের উপদেশানুসারে কলিকাতায় বাবু রামগোপাল ঘোষ মহাশয়ের ভবনে উপস্থিত হন। উক্ত বাবু কোন সাহায্য না করায়, নিতান্ত নিরুপায় হইয়া চিন্তাকুল হন। অবশেষে ভোজন করিবার জন্য তাঁহাদের দেশস্থ দ্বারিকানাথ বাবুর বহুবাজারের বাসায় উপস্থিত হন। তথায় আহার করিয়া দেশে গমন করেন। পুনর্ব্বার বন্ধুবর্গের উপদেশানুসারে আট পয়সা পাথেয় লইয়া, দুই দিবস পদব্রজে গমন করিয়া, কলিকাতায় রামগোপাল বাবুর বাটীতে আইসেন। কিন্তু তিনি বলেন যে, “আমার স্কুল নাই যে আমি তোমাকে পড়াইব।” অবশেষে হতাশ হইয়া, ভোজনের জন্য দেশস্থ উক্ত দ্বারিকানাথ বাবুর বাসায় গমন করেন। তথায় যাইয়া দেখিলেন, সেখানে