পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

দ্বারিকানাথ বাবুর বাসা নাই, সুতরাং নিরুপায় হইয়া আমাদের বাসায় বসিয়া চিন্তা ও নোদম করিতে লাগিলেন। আমরা তাঁহাকে ভোজন করাইলাম, এবং পরদিন তাঁহাকে উপদেশ দিলাম, তোমার অভিলষিত বিষয় অগ্রজের নিকট বল, তাহা হইলে, তিনি, তোমার উপায় করিয়া দিবেন। তৎকালে অগ্রজ, ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে ৮০৲ টাকা বেতনে হেড্‌ রাইটার ছিলেন। অনন্তর বিষ্ণু বাবু, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পায়ে ধরিয়া রোদন করিলে, তিনিও দয়ার্দ্র হইয়া বলিলেন, “তুমি কেন কাঁদিতেছ?” তাহাতে বিষ্ণুবাবু বলিলেন, “আমি গরীবের ছেলে, কৃষ্ণনগরের কলেজে অধ্যয়ন করিব মানস করিয়াছি, কিন্তু স্কুলের বেতন দিতে অক্ষম। অনেকের পরামর্শে রামগোপাল বাবুর নিকট আসিয়াছিলাম; কিন্তু তিনি মাসে মাসে একটি টাকাও সাহায্য স্বীকার পাইলেন না। মহাশয় যদি মাসে মাসে একটি করিয়া টাকা দেন, তাহা হইলে আমার স্কুলে পড়া হয়।” ইহা শুনিয়া অগ্রজ বলিলেন, “তথায় যদি আমার কেহ আত্মীয় থাকেন, তুমি তাহার নাম কর, আমি তাঁহার নিকট টাকা পাঠাইয়া দিব। এক্ষণে তোমার পথখরচ কি চাই বল?” ইহা শুনিয়া বিষ্ণু বাবু বলিলেন, “বাটী হইতে আটটি পয়সা আনিয়াছিলাম, তন্মধ্যে সাতটি খরচ হইয়াছে, একটিমাত্র আছে।” এই কথা শ্রবণ করিয়া দুই দিনের পাথেয়॥৵৹ দশ আনা দিলেন। বিষ্ণু বাবু, রামতনু লাহিড়ীর নাম করায়, অগ্রজ তাঁহার নিকটেই উহাঁর স্কুলের বেতন পাঠাইয়া দিতেন। বিষ্ণুবাবু স্কুলের বেতন ব্যতীত অপর কিছুই কখল গ্রহণ করেন নাই; একারণ, অগ্রজ মহাশয় বিষ্ণুবাবুকে বিশেষ স্নেহ করিতেন।

 উক্ত বিষ্ণুবাবুর কথায়, কৃষ্ণনগরনিবাসী ভগবানচন্দ্র দত্তকে মাসে মাসে ৮৲ টাকা দিতেন। ইহাঁর মৃত্যুর পর ইহাঁর স্ত্রীকে মাসে মাসে ৫৲ টাকা ও বৎসরে ৮ খানি বস্ত্র দিতেন। ভগবান দত্তের স্ত্রী, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মৃত্যুর দুই দিন পূর্ব্বে, মাসহারা ও বস্ত্র লইয়া গিয়াছিলেন।'

 খৃঃ ১৮৬৩ সালে নদীয়া জেলার অন্তঃপাতী কৃষ্ণনগরনিবাসী বাবু লক্ষ্মী-