পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
উপক্রমণিকা।

হইত। ঠাকুরদাস ক্ষুধায় কাতর হইতেন। হাতে পয়সা একটীও নাই যে, ক্ষুধা পাইলে এক পয়সার জলপান খান; তাঁহার পুজির মধ্যে এক পিতলের থাল ও এক পিতলের জলপাত্র ছিল। মনে মনে স্থির করিলেন, ইহা বিক্রয় করিলে কিছু পয়সা হইবে; সময়ে সময়ে ক্ষুধা পাইলে, এক এক পয়সার জলপান ক্রয় করিয়া খাইলেও দিনপাত হইবে। এই স্থির করিয়া যোড়া-সাঁকোর নূতন বাজারে এক কাঁসারীর দোকানে ঐ থালা ও জলপাত্র বিক্রয় করিতে যান। কাঁসারী, থালা ও ঘটি ওজন করিয়া ১।০ মূল্য স্থির করেন; কিন্তু অপরিচিত ব্যক্তির নিকট পুরাতন দ্রব্য ক্রয় করিতে ভয় করিয়া বলিল যে, ইতিপূর্ব্বে‌ এক বৃক্তির নিকট পুরাতন দ্রব্য ক্রয় করিয়া, আমরা বিষম বিপদে পড়িয়াছিলাম; তদবধি সকল দোকানদার প্রতিজ্ঞা করিয়াছি যে, অপরিচিত লোকের নিকট কখনও পুরাতন দ্রব্য ক্রয় করিব না। ইহা শুনিয়া ঠাকুরদাস হতাশ হইয়া থালা ও ঘটি লইয়া বাসায় ফিরিয়া আসিলেন। মধ্যে মধ্যে এক এক দিন শিক্ষক সীপ্‌সরকারের বাটী আসিতে অধিক রাত্রি হইত, ঠাকুরদাস ক্ষুধায় কাতর হইতেন। একদিন শিক্ষক প্রাতঃকাল হইতে কার্য্যের বাহুল্য‌প্রযুক্ত বাসায় সমাগত না হওয়ায়, ঠাকুরদাস ক্ষুধায় ব্যাকুল হইয়া, সন্নিহিত এক বৃদ্ধার মুড়ীর দোকানের সম্মুখে কিয়ৎক্ষণ দণ্ডায়মান থাকিয়া বলিলেন, “একটুকু জল দিতে পার, আমার তৃষ্ণা পাইয়াছে।” তাহাতে বৃদ্ধ পিতলের রেকবে মুড়কী দিয়া পানীয় জল দিল; উহা খাইতে খাইতে ঠাকুরদাসের চক্ষে জল আসিল, তাহাতে বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা ঠাকুর, তুমি কাঁদ কেন?” তাহাতে তিনি উত্তর করিলেন, “মা! আজ সমস্ত দিন আমার ভোজন হয় নাই।” বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করিল, “কেন হয় নাই?” তিনি বলিলেন, “প্রাতঃকাল হইতে সরকার মহাশয় বাসায় আগমন করেন নাই।” ইহা শুনিয়া দয়াময়ী বৃদ্ধা, দধি ও মুড়কী মুড়ি দিয়া ফলাহার করাইল এবং বলিল, যেদিন তোমার ভোজন না হইবে, সেই দিন। এখানে আসিয়া ফলাহার করিবে। একদিন সরকার অধিক রাত্রিতে বাটী আসিয়া