পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

পুস্তক অক্লেশে আবৃত্তি করিতে সমর্থ হয়। ভারতবর্ষের মধ্যে যাহারা প্রথমে বাঙ্গালা-ভাষা শিক্ষা করিয়া থাকেন, তাহাদের মধ্যে প্রায় সকলকেই অগ্রজের রচিত দ্বিতীয়-ভাগ বর্ণপরিচয় শিক্ষা করিতে হয়।

 বালকবালিকাগণের পক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ বর্ণ-পরিচয় শিক্ষা করিয়া, বোধোদয় ও নীতিবোধ অধ্যয়ন করা কিছু কঠিন বোধ হইবে, একারণ অগ্রজ মহাশয়, শিশুগণের শিক্ষার সুবিধার জন্য, ইংরাজী ঈসপ্‌রচিত গল্পের সরল বাঙ্গালা-ভাষায় অনুবাদ করিয়া, সন ১২৬২ সালের ফাল্গুন, মাসে কথামালা নাম দিয়া, এক পুস্তক প্রচার করিলেন।

 সন ১২৬৩ সালের ১লা শ্রাবণ অগ্রজ মহাশয়, চরিতাবলী মুদ্রিত ও প্রকাশিত করেন। ইহাতে অতি সরল-ভাষায় ডুবাল, উইলিয়ম রস্কো, হীন, জিরমষ্টোন, প্রভৃতি ইউরোপীয় মহানুভবদিগের জীবনচরিত বর্ণিত হইয়াছে। ইহাঁদের জীবনচরিত পাঠ করিলে, এতদ্দেশীয় শিশুগণের লেখাপড়ায় অনুরাগ জন্মিবে ও উৎসাহবৃদ্ধি হইতে পারে; যেহেতু, উপরি উক্ত মহাত্মারা প্রায় সকলেই দরিদ্রের সন্তান। সকলেই নানারূপ ক্লেশ পাইয়া, নিজের যত্নে ও পরিশ্রমে লেখাপড়া শিখিয়া, জগদ্বিখ্যাত হইয়াছিলেন। অগ্রজ মহাশয়, এতদ্দেশীয় দরিদ্র-বালকগণকে লেখাপড়া শিখিতে উৎসাহান্বিত করিয়া দিবার মানসে, আগ্রহপূর্ব্বক পরিশ্রম-সহকারে এই পুস্তক রচনা করিয়াছিলেন। ইহা বাঙ্গালা-প্রদেশের সকল বঙ্গবিদ্যালয়ের শিশুগণ সমাদরপূর্ব্বক অধ্যয়ন করিয়া থাকেন।

 বাবু শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের বিধবাবিবাহের কয়েকদিন পূর্ব্বে, পূজ্যপাদ প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশ মহাশয়, অগ্রজের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া বলেন, “ঈশ্বর! তুমি বিধবাবিবাহের দ্বিতীয় পুস্তকে যে বিচার করিয়াছ, তাই আমি আদ্যোপান্ত পাঠ করিয়া পরম আহ্লাদিত হইয়াছি। বিধবাবিবাহ যে শাস্ত্রসম্মত, তাহা সকলকেই স্বীকার করিতে হইবে। তুমি যে অত্যন্ত পরিশ্রম-সহকারে নানা স্থানে যাইয়া, আবেদন-পত্রে সম্ভ্রান্ত লোকদের স্বাক্ষর করাইয়া, রাজদ্বারে