পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিধবাবিবাহ।
১২৯

 সন ১২৬৩ সালের ২৪শে অগ্রহায়ণ সর্ব্বপ্রথমে মহাসমারোহপূর্ব্বক কলিকাতায় (সুকিয়া-স্ট্রীটস্থ অগ্রজের পরমবন্ধু বাবু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভবনে) একটি বিধবা-কন্যার বিবাহবিধি সম্পন্ন হইল। বর, বিখ্যাত কথক, সম্রান্ত ও ধনশালী, খাটুয়াগ্রামনিবাসী রামধন তর্কবাগীশের পুত্র শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। ইনি প্রথমে সংস্কৃত-কলেজের আসিষ্টাণ্ট সেক্রেটারির পদে নিযুক্ত ছিলেন; তৎপরে ঐ বিদ্যালয়ের সাহিত্যশাস্ত্রের অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন। কিছুদিন পরে মুরশিদাবাদের জজ-পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত হন। কন্যার নাম শ্রীমতী কালীমতী দেবী, ইহার পিতার নাম ব্রহ্মানন্দ মুখোপাধ্যায়, ইহাঁর নিবাস বর্ধমান-জেলার অন্তঃপাতী পলাশডাঙ্গা গ্রাম। কন্যার প্রথম বিবাহ চারি বৎসর বয়সের সময়ে হইয়াছিল, ছয় বৎসরের সময় বিধবা হয়। বিধবাবিবাহের সময় তাহার বয়স দশ বৎসর মাত্র। নদীয়া জেলার অন্তঃপাতী বহিরগাছি গ্রামনিবাসী হরমোহন ভট্টাচার্য্য়ের সহিত প্রথম পাণিগ্রহণ হইয়াছিল। এই প্রথম বিধবাবিবাহ অতি সমারোহপূর্ব্বক সম্পন্ন হয়। ইহাতে অগ্রজ মহাশয়ের বিস্তর অর্থব্যয় হয়। সংস্কৃত-কলেজের অধ্যাপক জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন, ভরতচন্দ্র শিরোমণি, প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশ ও তারানাথ তর্কবাচস্পতি এবং অন্যান্য টোলের অধ্যাপক, অনেকেই বিবাহ-সভায় উপস্থিত ছিলেন। বালিগ্রামনিবাসী বাবু মাধবচন্দ্র গোস্বামী, ঐ গ্রামের বহুসংখ্যক ব্রাহ্মণসহ সভায় উপস্থিত ছিলেন। তৎকালীন সংস্কৃত-কলেজের পণ্ডিত শিবপুরনিবাসী হরিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় এবং উক্ত গ্রামের অনেক ব্রাহ্মণও সমুপস্থিত ছিলেন। কলিকাতানিবাসী সম্রান্ত ও ধনশালী বাবু নীলকমল বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবু রামগোপাল ঘোষ প্রভৃতি অনেক লোকও উপস্থিত ছিলেন। এতদ্ব্যতীত নানা স্থানের ব্রাহ্মণপণ্ডিতগণ বিবাহের সভাস্থলে সমুপস্থিত হইয়াছিলেন। বিবাহ-কার্য্য নির্ব্বিঘ্নে সম্পন্ন হইয়াছিল। প্রথমতঃ বিধবা-বিবাহ যাহাতে না হইতে পারে, তদ্বিষয়ে কলিকাতাস্থ ও ভিন্ন ভিন্ন দেশবাসিগণ ঐক্য হইয়া, অনেক বাধা দিয়া কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই।