সপ্তাহের মধ্যে বৃহস্পতিবার নানাবিষয়ের যুক্তি ও পরামর্শ করিবার জন্য, অগ্রজকে তাঁহার বাটীতে যাইবার আদেশ করেন। অগ্রজ, তজ্জন্য প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার উহাঁর ভবনে যাইতেন। একদিন সম্ভ্রান্তপদস্থ মান্যগণ্য ও রাজন্য প্রভৃতিতে গৃহ পরিপূর্ণ হইয়াছিল; এমন সময়ে অগ্রজ মহাশয় ঐ গৃহে সমুপস্থিত হইয়া, চাপরাসী দ্বারা টিকিট পাঠাইবামাত্র চাপরাসী আসিয়া বলিল, “পণ্ডিতজীকে লাট সাহেব আসিতে বলিলেন।” তাহা শ্রবণ করিয়া, রায় কিশোরীচাঁদ মিত্র প্রমুখ ভিজিটারগণ আশ্চর্য্য়ান্বিত হইলেন যে, আমাদের মধ্যে কেহ পুলিশের মাজিষ্ট্রেট, কেহ রাজা, কেহ উচ্চপদস্থ কর্ম্মচারী। আমরা বিদ্যাসাগরের আসিবার অনেক পূর্ব্বে টিকিট পাঠাইয়াছি; তাহাতে আমাদিগকে আহ্বান না করিয়া, আমাদের অনেকক্ষণ পরে আগত, তালতলার চর্ম্মপাদুকা-পরিহিত ও গাত্রে লংক্লাথের চাদরযুক্ত ঐ ভট্টাচার্য্যকে অগ্রে ডাকিলেন। মনে মনে এইরূপ অপমান বোধ হওয়াতে, সকলে ঈর্ষ্য়ান্বিত হইয়া, কোন এক উচ্চপদস্থ সাহেবের দ্বারা লাট সাহেবকে জানাইলেন যে, “তিনি বিদ্যাসাগরকে কি কারণে এত সম্মান করেন?” ইহা শ্রবণ করিয়া, লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণর উহাঁদের মধ্যে প্রধান ব্যক্তিকে উত্তর দেন যে, “বিদ্যাসাগরের দ্বারা অনেক উপদেশ ও কাজ পাই। কারণ, বিদ্যাসাগর নিঃস্বার্থ ও দেশহিতৈষী এবং সকল বিষয়ে অভিজ্ঞ ও অসাধারণ বুদ্ধিমান্। ইহাঁর নিকট সদুপদেশ গ্রহণ করিলে, দেশের অনেক উপকার সাধিত হইয়া থাকে। যাঁহারা আসিয়াছেন, তাঁহারা কেবল স্বীয় স্বীয় স্বার্থ-সাধনোদ্দেশে আসিয়া থাকেন। বিদ্যাসাগরের সহিত কাহারও তুলনা নহে।”
একদিন ছোট লাট হেলিডে সাহেব, কথাপ্রসঙ্গে অগ্রজ মহাশয়কে বলেন যে, “বঙ্গদেশের মধ্যে কেবল কলিকাতায় একটিমাত্র বালিকাবিদ্যালয় স্থাপিত হইয়াছে। কুসংস্কারপরতন্ত্র হইয়া সর্ব্বসাধারণ-লোকে বালিকাগণকে ঐ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নার্থ প্রেরণ করেন না; অতএব আমার ইচ্ছা যে, তুমি মফঃস্বলের স্থানে স্থানে বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন না করিলে, সাধারণ বালিকাগণের লেখাপড়া