পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

নিরুপায় হইয়া, কলেজের স্থায়িত্বের মানসে বিলাতে উইলসন্‌ সাহেবকে এই পত্রখানি লিখেন যে—

অস্মিন্ সংস্কৃতপাঠদ্মসসরসি ত্বৎস্থাপিতা যে সুধী-
হংসা কালবশেন পক্ষরহিতা দূরং গতে তে ত্বয়ি।
তত্তীরে নিবসন্তি সংহিতশরা ব্যাধাস্তদুচ্ছিত্তয়ে
তেভ্যত্বং যদি পাসি পালক তদা কীর্ত্তিশ্চিরং স্থা্স্যতি॥

 উইলসন্ সাহেব বিলাতে কলেজের প্রফেসার ছিলেন। বিদ্যালয়েই ঐ পত্র পাইয়া, উক্ত কবিতা পাঠ করিয়া নেত্রজলে প্লাবিত হইলেন। সেই বিদ্যালয়ের সম্ভান্তবংশীয় বিদ্যার্থিগণ প্রফেসারের রোদনের কারণ অবগত হইয়া সকলে মুক্তকণ্ঠে বলিল, যে ভাষা পাঠ করিলে এরূপ চক্ষুর জল বিনির্গত হয়, সেই ভাষা একেবারে পরিত্যাগ করা যুক্তিসিদ্ধ নয়। অনন্তর উপস্থিত সকলেই ঐক্য হইয়া কর্ত্তৄপক্ষগণকে অনুরোধ করায়, তাঁহারা সংস্কৃত-কলেজ স্থায়ী করিলেন সত্য বটে; কিন্তু তদবধি ব্যয়ের অনেক লাঘব করিয়া দিলেন এবং বিদ্যালয়ে নুতন প্রবিষ্ট আর কেহ বৃত্তি পাইল না।

 ঐ সময়ে লালবাজারের একটী সামান্য বাটীতে হিন্দু-কলেজ ছিল। তথায় নানা অসুবিধাপ্রযুক্ত ঐ বিদ্যালয়ের কর্ম্মাধ্যক্ষগণ, সংস্কৃত-কলেজের পূর্ব্ব ও পশ্চিম উভয় পার্শ্বের শূন্য-ভবনে হিন্দু-কলেজ স্থাপনের অনুমতি প্রার্থনা করেন। গবর্ণমেণ্ট, সংস্কৃত-কলেজের ঐ স্থানে হিন্দু-কলেজ স্থাপনের আদেশ প্রদান করেন। তদবধি ঐ স্থানে হিন্দু-কলেজের শিক্ষাকার্য্য় সমাধা হইয়া আসিতেছে। ক্রমশঃ ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি হইলে পর, সংস্কৃত-কলেজের পশ্চিমাংশের উপরের কয়েকটী গৃহ ও হল অধিকার করিয়াছে। ঐ সময়ে প্রেসিডেন্সিকলেজের স্বতন্ত্র বাটীর বন্দোবস্ত হইয়াছিল। তৎকালে, বিদ্যাসাগর মহাশয়, সংস্কৃত-কলেজে ইংরাজী-শিক্ষার নুতন সুপ্রণালী স্থাপন করেন; সুতরাং অধিক ঘরের আবশ্যক হয়। পশ্চিমাংশের উপরের দুইটি গৃহ হিন্দুকলেজের কোনও ব্যবহারে লাগিত না, কেবল চাবি বন্ধ থাকিত। ঐ