পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

বালিকাবিদ্যালয়ে স্ব স্ব দুহিতা প্রভৃতিকে প্রেরণ করিতে লাগিলেন। গবর্ণমেণ্ট, স্ত্রীশিক্ষা-বিষয়ে প্রজাবর্গের উৎসাহ-বর্দ্ধনার্থ পল্লীগ্রামের বালিকাবিদ্যালয়ে সাহায্য-প্রদানে প্রবৃত্ত হইলেন। অগ্রজ মহাশয়ও ঐ সকল বালিকাবিদ্যালয়ে যেরূপ সাহায্য করিতেন, সেইরূপ অপরাপর স্থানের সম্ভ্রান্ত লোকদিগের স্থাপিত বালিকাবিদ্যালয়েও মাসে মাসে সাহায্য করিতেন; এবং ঐ সকল বালিকাবিদ্যালয়ের পারিতোষিক-দানের সংবাদ-প্রাপ্তি-মাত্র উৎসাহ-বর্দ্ধনার্থ অন্ততঃ বিংশতি মুদ্রার পারিতোষিক পুস্তক পাঠাইয়া দিতেন। কিছু দিন পরে, হিন্দুস্থানেও বালিকাবিদ্যালয় স্থাপিত হইতে লাগিল। ঐ সময়ে কাশীবাসী রাজা দেবনারায়ণ সিংহ প্রভৃতি মহোদয়গণ, প্রায় প্রতি বৎসর কলিকাতায় ইণ্ডিয়া লেজিস্‌লেটিভ কৌন্সিলে আগমন করিতেন। অগ্রজ মহাশয়, ঐ সকল বড় লোকদিগকে কলিকাতার বেথুন-ফিমেল-স্কুল দেখাইবার জন্য সমভিব্যাহারে লইয়া যাইতেন। উক্ত বিদ্যালয়ের যে কয়েকটি বালিকা ভালরূপ শিক্ষা করিয়াছিল, রাজা দেবনারায়ণ সিংহ, তাহাদিগকে বেনারসের সাটি পুরস্কার করেন। একবার রাজা দেবনারায়ণ সিংহ মহোদয়, কথাপ্রসঙ্গে অগ্রজ মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন যে, “এই স্কুলবাটী কোন্ মহাত্মার অর্থব্যয়ে নির্ম্মিত হইয়াছে?” তাহার প্রশ্ন শুনিয়া অগ্রজ বলেন, “মহামতি অবলাবন্ধু বেথুন সাহেব এই বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন করিয়া, ইহার ইমারত প্রভৃতির জন্য প্রায় লক্ষ টাকা প্রদান করিয়াছেন।” অনন্তর ঐ সকল মহাত্মারা দেশে গমনপূর্ব্বক প্রোৎসাহিত হইয়া, স্থানে স্থানে বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন-বিষয়ে আন্তরিক যত্ন করিতেন।

 তৎকালে সিসিল বীডন সাহেব, হিন্দুবালিকাগণের লেখাপড়া শিক্ষার উৎসাহ -বর্দ্ধনার্থ আন্তরিক যত্ন প্রকাশ করিতেন, এবং বেথুন-ফিমেল-স্কুলের পারিতোষিক -দান-সময়ে গবর্ণর জেনেরল প্রভৃতিকে সর্ব্বসমক্ষে প্রকাশ করিয়া বলিতেন, ভারতবর্ষের বালিকাবিদ্যালয়-প্রচলন-বিষয়ে বিদ্যাসাগরই একমাত্র প্রধান উদ্বোগী। মফঃস্বলে যে কোন স্থানে বালিকাবিদ্যালয় হইয়াছে, তাহাও বিদ্যাসাগরের যত্নে ও উৎসাহেই হইয়াছে এবং পরেও যে ভারতবর্ষের নানা