পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

রোধে ভোগ করিয়া আসিয়াছেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের উক্তরূপ নিঃস্বার্থদান-প্রভাবে কৃষ্ণনগরের মধ্যে ব্রজবাবু একজন ধনশালী ও মান্যগণ্য ব্যক্তি হইয়া উঠিয়াছিলেন।

 অতঃপর সন ১২৯২ সালের অগ্রহায়ণ মাসে অগ্রজ মহাশয়, ব্রজবাবুর ও তাঁহার পরমাত্মীয় কোন ব্যক্তির কার্য্যকলাপ অবলোকনে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইয়া, ডিপজিটারি হইতে স্ব-রচিত ও প্রকাশিত সমস্ত পুস্তক উঠাইয়া লইয়া, সন ১২৯২ সালের ১৮ই আগ্রহায়ণ তারিখে, কলিকাতা সুকিয়াষ্ট্রীটের ২৫ নং বাটীতে কলিকাতা পুস্তকালয় নামে একটী নূতন পুস্তকালয় সংস্থাপিত করেন। তাঁহার স্ব-রচিত ও প্রকাশিত এবং ক্রীত সমস্ত পুস্তক এই স্থানেই বিক্রয় হইয়া থাকে। যে সময় সংস্কৃত-যন্ত্রের পুস্তকালয় হইতে পুস্তক সকল উঠাইয়া লন, ঐ সময়ে ব্রজবাবু অগ্রজকে ডিপজিটারি প্রত্যাৰ্পণ করিবার প্রস্তাব করেন; কিন্তু অগ্রজ মহাশয় তাহা না লইয়া, কেবলমাত্র নিজের পুস্তকগুলি উঠাইয়া লন। ডিপজিটারি ব্রজবাবুকেই রাখিতে বলিলেন। ইহাতে বিদ্যাসাগর মহাশয় যে কতদূর ঔদার্য্য প্রকাশ করিয়াছেন, তাহা পাঠকবর্গই অনুভব করিবেন।

 পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, কলিকাতাতেই পাঁচটী বিধবাবিবাহ-কার্য্য সমাধা হইয়াছে, পল্লীগ্রামে একটিও হয় নাই; একারণ, অগ্রজ মহাশয়, স্বদেশে বিবাহ দেওয়াইবার জন্য সবিশেষ প্রয়াস পাইয়াছিলেন। দেশীয় অনেক লোক তাঁহার নিন্দ করিত; কিন্তু মহাপুরুষকে সকলই সহ্য করিতে হইয়াছিল। দেশের বিধবা রমণীগণের ত্বরায় যাহাতে বিবাহ হয়, তদ্বিষয়ে জননীদেবী বিশিষ্টরূপ যত্নবতী হইয়াছিলেন। সন ১২৬৫ সালের আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে জেলা। হুগলি মহকুমা জাহানাবাদের অন্তঃপাতী রামজীবনপুর, চন্দ্রকোণা, সোলা, শ্রীনগর, কালিকাপুর, ক্ষীরপাই প্রভৃতি গ্রামে প্রায় পনরটি বিধবা রমণীর পাণিগ্রহণকার্য্য সমাধা হয়। অগ্রজ মহাশয়, ঐ সকল বিবাহের সমস্ত ব্যয় নির্ব্বাহ করেন। যাহারা বিধবার পাণিগ্রহণ করিয়াছিল, তাহাদের