পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

চতুষ্পা‌ঠী ছিল। ছাত্রগণকে অন্ন দিয়া শিক্ষা দিতেন। তন্ত্রশাস্ত্রে ইঁহার অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভক্তি ছিল। তিনি রামজীবনপুরের অতি সন্নিহিত করঞ্জী গ্রামে মাতামহাশ্র‌য়ে অবস্থিতি করিয়া, প্রায় প্রতি অমাবস্যার রাত্রিতে শব-সাধন করিয়া সিদ্ধপুরুষ হন; শেষাবস্থায় কাহারও সহিত কথা কহিতেন না, মধ্যে মধ্যে “মঞ্জুর” এই শব্দটি বলিতেন। পাতুল গ্রামের পঞ্চানন বিদ্যাবাগীশ অদ্বিতীয় পণ্ডিত ছিলেন। ইঁহার বাটীতে টোল ছিল; বিদ্যাবাগীশ প্রত্যহ অতিথি ও অভ্যাগত লোক সমূহকে ভোজন করাইতেন। দেশের সকল লোকেই বিদ্যাবাগীশকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি করিত। ইহার চারিটী পুত্র ছিল। জ্যেষ্ঠ রাধামোহন বিদ্যাভূষণ, মধ্যম রামধন তর্কবাগীশ, তৃতীয় গুরুপ্রসাদ শিরোমণি, কনিষ্ঠ বিশ্বেশ্বর তর্কালঙ্কার। সকলেই গুণবান্ ও দয়ালু ছিলেন। বিদ্যাবাগীশের দুই কন্যা ছিল। জ্যেষ্ঠা গঙ্গামণি দেবী, দ্বিতীয়া তারাসুন্দরী দেবী। জ্যেষ্ঠা গঙ্গামণির গর্ভে দুই কন্যা জন্মে। জ্যেষ্ঠার নাম লক্ষ্মীমণি দেবী, কনিষ্ঠার নাম ভগবতী দেবী। রামকান্ত প্রায় প্রতি রাত্রিতে শ্মশানে বসিয়া জপ করিতেন ও সংসারের সকল বিষয়ে ঔদাস্যাবলম্বন করিয়াছিলেন। জামাতা রামকান্ত শব-সাধন করিয়া মৌনাবম্বন করিয়াছেন, এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া, তাহার শ্বশুর উক্ত পাতুলগ্রামনিবাসী বিদ্যাবাগীশ মহাশয়, করঞ্জীগ্রাম হইতে জামাতা রামকান্ত, কন্যা গঙ্গামণি ও তাহার দুইটী কন্যাকে পাতুলগ্রামে আনয়ন করেন। পঞ্চানন বিদ্যাবাগীশ ও রাধামোহন বিদ্যাভূষণ প্রভৃতি ইহাদিগকে আন্তরিক স্নেহ করিতেন; তাহাদেরই যত্নে বীরসিংহনিবাসী ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহিত ভগবতীদেবীর বিবাহকার্য্য সম্পন্ন হইয়াছিল। ইতিপূর্ব্বে‌ রামজয়, (পুত্র ঠাকুরদাস লেখাপড়া ভালরূপ শিখিয়াছেন, বিষয়কর্ম্মে‌ লিপ্ত হইয়া পরিবারবর্গের কষ্ট নিবারণ ও ভরণপোষণাদি কার্য্য নির্ব্বা‌হ করিতে পারিবেন দেখিয়া) জন্মের মত ঈশ্বরারাধনায় তীর্থক্ষেত্রপর্য্য‌টনে প্রস্থান করেন। এই সুদীর্ঘকালের মধ্যে তাঁহার পরিবারগণের কোন সংবাদ পান নাই। রামজয় একদিবস (কেদার পাহাড়ে) নিশীথসময়ে স্বপ্ন দেখেন যে, রামজয়!