পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

যেহেতু অদ্যাপি আমরা ডেপুটী মাজিষ্ট্রেটের কর্ম্মে নিযুক্ত হইতে পারিলাম না।” পর দিবস দাদা, গ্রাণ্ডসাহেবের নিকট গমন করিয়া, সাহেবকে বিশেষরূপ অনুরোধ করাতে তিনি বলিলেন, “আচ্ছা, রামকমল শীঘ্রই কর্ম্ম পাইবেন।” দুঃখের বিষয় এই, বাসায় প্রত্যাগত হইয়া কিয়ৎক্ষণ পরে জানিলেন যে, রামকমল উদ্বন্ধনে প্রাণত্যাগ করিয়াছেন। রামক্ষয়, ত্বরায় ডেপুটী মাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত হইলেন। গিরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ওকালতীতে বিশিষ্টরূপ পশার করিয়াছেন, এজন্য ডেপুটী-মাজিষ্ট্রেটের পদগ্রহণ করিতে সম্মত হইলেন না।

 সন ১২৬৯ সালের কার্ত্তিক মাসে অগ্রজ মহাশয়, বাটী আগমন করেন। এই সংবাদে স্থানীয় অনেক দুঃখিনী ভদ্র-কুলাঙ্গন স্বীয় স্বীয় সাংসারিক কষ্টনিবারণ-মানসে তাঁহার নিকট আসিয়াছিলেন। তিনি দরিদ্র স্ত্রীলোকদের প্রতি বিশেষ দয়া প্রকাশ করিতেন। পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীজাতির প্রতি সচরাচর ইহাঁর অধিক অনুগ্রহ দৃষ্টিগোচর হইত। ঐ সময়ে বৎসরের মধ্যে প্রায় দুই তিন বার দেশে আগমন করিতেন। প্রত্যেক বারে অন্ততঃ নগদ ৫০০৲ টাকা অন্যুন ৫০০৲ টাকার বস্ত্র লইয়া আসিয়া, নিরুপায় স্ত্রীলোকদিগকে অকাতরে বিতরণ করিতেন।

 এক দিবস অগ্রজ, মধ্যাহ্ন-সময়ে বাটীর মধ্যে ভোজন করিতে যাইয়া দেখিলেন যে, দুইটি অপরিচিত স্ত্রীলোক বসিয়া আছেন। একটির বয়স প্রায় ৬০ বৎসর, অপরটির বয়স ১৮।১৯ বৎসর। তাহাদের পরিধেয় বস্ত্র আতি জীর্ণ, মুখের ভাব দেখিলেই বোধ হয়, উহারা অতি দুঃখিনী। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “মা! ইহারা কে? এখানে বসিয়া কেন?” জননীদেবী বলিলেন, “বয়োজ্যেষ্ঠাটি তোমার বাল্যকালের গুরুমহাশয়ের প্রথমকার স্ত্রী, আর অল্পবয়স্কটি ইহার কন্যা। ইহারা তোমাকে আপনাদের দুঃখের কথা বলিবার জন্য এখানে বসিয়া আছেন। তোমার গুরুমহাশয় দুই পুরুষিয়া ভঙ্গ-কুলীন, ছয় সাতটি মাত্র বিবাহ করিয়াছেন।” উক্ত চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের নিকট দাদা বাল্যকালে পাঠশালায় অধ্যয়ন করিয়াছিলেন; একারণ, উহাঁকে মাসে মাসে