পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৫৯

বিলক্ষণ সঙ্গতি করিয়াছেন। তিনি পরম ধার্ম্মিক ও পরম দয়ালু লোক। যদিও আমি বিমাতা আর প্রসন্নময়ী বৈমাত্রেয় ভগিনী, কিন্তু তাঁহার নিকট যাইয়া আমাদের অন্ন-বস্ত্রের দুঃখ জানাইলে, অবশ্য তাঁহার দয়ার উদ্রেক হইতে পারে। এই ভাবিয়া তাঁহার নিকট উপস্থিত হইলাম এবং সমস্ত ব্যক্ত করিয়া রোদন করিতে লাগিলাম। আমাদের কাতরতা-দর্শনে সপত্নীপুত্র হইয়াও যথেষ্ট স্নেহ ও যত্ন করিলেন এবং বলিলেন, মা, যতদিন আপনারা উভয়ে জীবিত থাকিবেন, ততদিন আমি আপনাদিগের ভরণ-পোষণ করিব। ইহা শুনিয়া, আমরা পরম আহলাদিত হইলাম। তিনি যথোচিত যত্ন করিতে লাগিলেন; কিন্তু তাঁহার বাটীর স্ত্রীলোকেরা সেরূপ নহেন। তাঁহারা প্রায় বলিতেন যে, এ আপদ্ আবার কোথা হইতে আসিল। স্ত্রীলোকদের সহিত প্রায় মনান্তর ঘটিত; একারণ, আমি একদিন সপত্নীপুত্রকে বলিলাম, বাবা, আমাদের উভয়ের প্রতি বাটীর স্ত্রীলোকেরা যেরূপ ব্যবহার করিতেছেন, তাহাতে আমরা ক্ষণকাল এখানে অবস্থান করিতে পারি না। তাহাতে তিনি বলিলেন, আমি সকলই ইতিপূর্ব্বে অবগত হইয়াছি। বাটীর স্ত্রীলোকদিগকে শাসন করিলে, উহারা আপনাদের প্রতি আরও অসহ্য ব্যবহার করিবেন। এমন স্থলে আপনারা এখান হইতে প্রস্থান করুন। আমি আপনাদের ভরণপোষণ জন্য, মাসে মাসে কিছু কিছু সাহায্য করিতে পারি। এইরূপে নিরাশ্বাস হইয়া, কন্যার সহিত তথা হইতে বহির্গত হইলাম। পরিশেষে ভাবিলাম, স্বামী জীবিত আছেন এবং বিদ্যাসাগরের বিদ্যালয়ে পণ্ডিতি-কর্ম্ম করিয়া থাকেন। তাঁহার নিকট যাইয়া রোদন করিলে, অবশ্য কন্যাটির জন্য দয়া হইতে পারে। এই স্থির করিয়া দশ বার দিবস অতীত হইল, এখানে আসিয়াছি। পতি নিজে ভদ্রলোক বটে, কিন্তু তিনি তাঁহার দুইটী ভগিনীর নিতান্ত বশীভুত, তাহাদের পরামর্শে আমাদিগকে জবাব দিলেন যে, তোমাদের এখানে থাকা হইবে না। তোমাদিগকে অন্ন-বস্ত্র দিতে পারিব না। স্বামীর কথা শুনিয়া আশ্চর্য্যান্বিতা হইলাম। কোথা যাই কি করি ভাবিতেছিলাম, এমন সময়ে