পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

এই গ্রামের নবীন চক্রবর্ত্তী ও হারাধন চক্রবর্ত্তী প্রভৃতি ও অন্যান্য অনেক লোক বলিল, বিদ্যাসাগর পরম দয়ালু, অনাথা স্ত্রীলোকের একমাত্র বন্ধু। তিনি গতকল্য বাটী আসিয়াছেন, আসিয়া অবধি অনেক দরিদ্র স্ত্রীলোককে যথেষ্ট টাকা ও বস্ত্র বিতরণ করিতেছেন। তাহা শুনিয়া আমরা তোমার নিকট উপস্থিত হইয়াছি। তুমি আমাদের যাহা হয়, একটা উপায় করিয়া দাও।” বৃদ্ধার ঐ সকল কথা শুনিয়া, বিদ্যাসাগর মহাশয় দুঃখে অভিভূত হইলেন, এবং তাঁহার নয়নদ্বয় অশ্রুজলে প্লাবিত হইল।

 কি আশ্চর্য্য! পুত্র ও স্বামী অম্নান-বদনে বলিলেন, তোমাদিগকে অন্ন-বস্ত্র দিতে পারিব না, তোমরা যথায় ইচ্ছা যাও! কিন্তু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিত উহাদের কোন সংস্রব নাই, তিনি বৃদ্ধার কথা শুনিয়া রোদন করিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে বৃদ্ধাকে আশ্বাস প্রদান করিয়া, চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের বাটীতে গমন করিয়া বলিলেন, “আপনার ব্যবহার দেখিয়া আমি আশ্চর্য্যান্বিত হইয়াছি। আপনি কেমন করিয়া বৃদ্ধ স্ত্রী ও যুবতী কন্যাকে বাটী হইতে বহিস্কৃত করিয়া দিতেছেন? আপনি তাঁহাদিগকে বাটীতে রাখিবেন কি, না জানিতে ইচ্ছা করি।” দাদার এই ভাবভঙ্গি দেখিয়া, গুরুমহাশয় ভয় পাইলেন, এবং বলিলেন, “তুমি এক্ষণে বাটী যাও, আমি ঘরে গিয়া দুই ভগিনীর সহিত বুঝিয়া, পরে তোমার নিকট যাইতেছি।” তদনন্তর তিনি অগ্রজের নিকট আসিয়া বলিলেন, “যদি তুমি তাহাদের হিসাবে মাসে মাসে স্বতন্ত্র কিছু দিতে সম্মত হও, তাহা হইলে আমি উহাদিগকে রাখিতে পারি; নচেৎ আমার ভগিনীদ্বয় উহাদিগকে রাখিতে সম্মত হইবে না।” অগ্রজ, তৎক্ষণাৎ স্বীকার পাইলেন, এবং তিন মাসের অগ্রিম বার টাকা তাঁহার হস্তে দিয়া বলিলেন, “এইরূপে তিন মাসের টাকা অগ্রিম পাইবেন। এতদ্ভিন্ন ইহাঁদের পরিধেয় বস্ত্রের ভার আমার প্রতি রহিল।” ছয় মাসের বস্ত্র তাঁহার হস্তেই প্রদান করেন। ছয় মাস পরে আবার বস্ত্র প্রদানের ভার আমার প্রতি অৰ্পণ করেন। গুরুমহাশয় আর কোন ওজর করিতে না