পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৬৩

রচিত সীতার বনবাসও দেখিয়াছি। লেখার পাণ্ডিত্য-দর্শনে মোহিত হইতে হয়। কারুণ্য-রাসের বর্ণনপক্ষে ইহাঁকে বাল্মীকির তুল্য বলিলেও বোধ হয় অত্যুক্তি হয় না। অগ্রজ মহাশয়, বাঙ্গালা-ভাষায় যেরূপ পাণ্ডিত্য প্রকাশ করিয়াছেন, বোধ করি, এরূপ বাঙ্গালা-ভাষা লেখার প্রতিদ্বন্দ্বী কেহ ভারতবর্ষে অদ্যাপি জন্মগ্রহণ করেন নাই। অতি নিষ্ঠুর নির্দ্দয় ব্যক্তিও সীতার বনবাসের অষ্টম পরিচ্ছেদ পাঠ বা শ্রবণ করিলে, অশ্রাজল বিসৰ্জন না করিয়া ক্ষান্ত থাকিতে সক্ষম হন না।

 এই সময়ে নদীয়া জেলার মহারাজা সতীশচন্দ্র রায় বাহাদুর মানবলীলা সংবরণ করিলে পর, তাঁহার পত্নী, রাণী ভুবনেশ্বরী দেবী, গুরুদেব লক্ষ্মীকান্ত ভট্টাচার্য্য ও মোক্তারের পরামর্শানুসারে পোষ্যপুত্র গ্রহণ না করিয়া, স্বয়ং বিষয়কার্য্য চালাইতে অভিলাষ করেন। যাহাতে বিষয় কোট অব ওয়ার্ডের অধীনে যায়, তদ্বিষয়ে তাঁহাদের গুরুদেব ও মোক্তার, বিধিমতে চেষ্টা পাইতে ছিলেন। কৃষ্ণনগরের দুই একটি ভদ্রলোক ও তৎকালীন দেওয়ান বাবু কার্ত্তিকচন্দ্র রায় মহাশয়, অগ্রজ মহাশয়কে বিশেষরূপে অনুরোধ করেন যে, তিনি কৃষ্ণনগর যাইয়া রাণীকে উপদেশ দিয়া, যাহাতে বিষয়টি কোর্ট অব ওয়ার্ডের অধীনে যায়, তাহা করুন। তাহা না করিলে, নদীয়ার বিখ্যাত মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাম ও বংশমর্য্যাদা এককালে বিলুপ্ত হইবার সম্ভাবনা। ইহা শ্রবণ করিয়া অগ্রজ মহাশয়, ত্বরায় কৃষ্ণনগর গমন করিয়া, রাণীকে নিজে ও কমিসনর ক্যাম্বেল সাহেব সহোদয়ের দ্বারা নানাপ্রকার উপদেশ দিয়া, বিষয় কোর্ট অব ওয়ার্ডের অধীনে আনাইয়াছিলেন। তাহাতেই এই ফলোদয় হইয়াছিল যে, ঋণ পরিশোধ হইয়া এক্ষণকার মহারাজা ক্ষিতীশচন্দ্র রায় বাহাদুর সাবালক হইয়া, দুই লক্ষ দশ হাজার টাকা প্রাপ্ত হন। তজ্জন্য মহারাজা ক্ষিতীশচন্দ্র, কলিকাতায় আগমন করিয়া, কৃতজ্ঞতাপ্রদর্শনার্থ অগ্রজ মহাশয়ের বাটতে তাঁহার সহিত মধ্যে মধ্যে সাক্ষাৎ করিতেন। অপিচ, বর্তমান মহারাজার পিতামহ শ্রীশচন্দ্র রায়-বাহাদুর, অগ্রজ মহাশয়কে এত আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি