পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

করিতেন যে, বিধবাবিবাহের আবেদনপত্রে স্বয়ং স্বাক্ষর করিয়াছিলেন এবং যৎকালে গ্রাণ্ড্ সাহেব মহোদয়কে কলিকাতা ও অন্যান্য প্রদেশের সন্ত্রান্ত ধনশালী ও সুশিক্ষিত লোক প্রশংসাপত্র প্রদান করেন, তৎকালে শ্রীশচন্দ্র রায়বাহাদুর স্বয়ং উক্ত সাহেবের বাটীতে যাইয়া, স্বহস্তে ঐ পত্র সাহেবকে প্রদান করেন। রাজা শ্রীশচন্দ্র রায়-বাহাদুর বিধবাবিবাহের পক্ষসমর্থনকারী ছিলেন। তাঁহার অভিপ্রায় ছিল, কলিকাতায় প্রথম বিবাহসময়ে, তাঁহার অধীনস্থ কৃষ্ণনগর সমাজের প্রধান প্রধান ব্যক্তিদিগকে সমভিব্যাহারে লইয়া কলিকাতায় আগমনপূর্বক সভাস্থ হইয়া, প্রথম বিধবাবিবাহ কার্য্য সম্পাদন করিবেন; কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, হতভাগিনী হিন্দু বিধবাদিগের দুর্ভাগ্যবশতঃ ঐ বিবাহের পূর্বদিবস তাঁহার কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যু হয়। এই বিপদে পতিত হওয়ায়, তিনি সভায় উপস্থিত হইতে পারেন নাই। ইহাও প্রকাশ আছে যে, নবদ্বীপাধিপতি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের বংশীয়েরা বঙ্গদেশের সকল সমাজের ও জাতীয় আচার-ব্যবহারাদির কর্ত্তা; তিনি ঐ বিবাহে উপস্থিত হইতে পারিলে, বিধবাবিবাহ বঙ্গদেশে সর্ব্ববাদি-সম্মত হইয়া প্রচলিত হইবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা ছিল। তাঁহার এই অনুপস্থিতিজন্য বিপক্ষদল প্রবল হইয়াছিল।

 বৰ্দ্ধমান-জেলার অন্তঃপাতী চকদিঘী-গ্রামনিবাসী ধনশালী সন্ত্রান্ত জমিদার বাবু সারদাপ্রসাদ রায়সিংহ মহোদয়ের সহিত অগ্রজ মহাশয়ের বিশেষ আত্মীয়তা ছিল; তজ্জন্য তিনি সারদাবাবুর অনুরোধে মধ্যে মধ্যে চকৃদিঘী যাইতেন এবং সারদাবাবুও মধ্যে মধ্যে কলিকাতায় আসিয়া, তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতেন। সারদাবাবুর পুত্রকন্যা হয় নাই। এক সময়ে তিনি কথাপ্রসঙ্গে কলিকাতায় অগ্রজকে বলেন, “আমার বংশ-রক্ষা হইল না। বংশরক্ষার জন্য পোষ্যপুত্র গ্রহণ করিব; এবিষয়ে আপনার মত কি?” ইহা শুনিয়া অগ্রজ মহাশয় “প্রত্যুত্তর করেন যে, “পরের ছেলেকে টাকা দিয়া ক্রয় করিয়া গ্রহণ করা আমার মতে ভাল নয়; কারণ, সেই বালক বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়া সৎ কি অসৎ হইবে, তাহা বলা দুষ্কর। যদি দুশ্চরিত্র হয়, তাহা হইলে অল্পদিনের মধ্যেই