পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
উপক্রমণিকা।
১৩

তুমি বৃথা কেন ভ্রমণ করিতেছ? স্বদেশে যাও, তোমার বংশে এক সুপুত্র জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তিনি তোমার বংশের তিলক হইবেন। তিনি সাক্ষাৎ দয়ার সাগর ও অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইয়া, নিরন্তর বিদ্যাদান ও নিরুপায় লোকদিগের ভরণপোষণাদির ব্যয়নির্ব্বা‌হ দ্বারা তোমার বংশের অনন্তকালস্থায়িনী কীর্ত্তি স্থাপন করিবেন। রামজয়, পাহাড়ের মধ্যে নিশীথসময়ে এরূপ অসম্ভব স্বপ্ন-দর্শন করিয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন যে, আমি বহুদিন অতীত হইল সংসারাশ্রমে জলাঞ্জলি দিয়া, নিভৃত স্থানে ঈশ্বরারাধনায় মনপ্রাণ সমর্পণ করিয়া কালাতিপাত করিতেছি। এক্ষণে তাহারা কি করিতেছে ও কে আছে না আছে, তাহাও জানি না। এবম্বিধ চিন্তায় নিমগ্ন হইয়া পুনর্ব্বা‌র নিদ্রাভিভূত হইলে, কে যেন বলিয়া দিল, তুমি পরিবারগণের নিকট প্রস্থান কর, আর বিলম্ব করিও না; তোমার প্রতি ঈশ্বর সদয় হইয়াছেন। নিদ্রাভঙ্গ হইলে, নানা প্রকার ভাবিয়া চিন্তিয়া, রামজয় স্বদেশাভিমুখে যাত্রা করিলেন। অনবরত ৬ মাস পদব্রজে গমন করিয়া, বীরসিংহায় সমুপস্থিত হইয়া শুনিলেন, তাঁহার পুত্র ঠাকুরদাস কলিকাতায় বিষয়কর্ম্মে নিযুক্ত থাকিয়া সংসার প্রতিপালন করিতেছেন। জ্যেষ্ঠপুত্র ঠাকুরদাসের ও কনিষ্ঠ কালিদাসের বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন হইয়াছে এবং জ্যেষ্ঠপুত্র ঠাকুরদাসের পত্নী গর্ভবতী হইয়া অবধি উন্মাদগ্রস্তা হইয়াছেন। অনন্তর রামজয় দেশে আগমন করিয়াছেন, এ সংবাদ কলিকাতায় পুত্রদ্বয়কে লেখা হইল। সংবাদ-প্রাপ্তিমাত্রেই বহুকালের পর পিতৃসন্দর্শনার্থে ঠাকুরদাস ও কালিদাস কলিকাতা হইতে বীরসিংহায় আগমন করিলেন।