পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

অবস্থা অবলোকন করিবার জন্য তাহাদের বাটী গিয়াছিলেন। তাহাদের একটি শিশুকে অতি শীর্ণকায় দেখিয়া বলিলেন, “ছেলেটি এত রোগা কেন?” তাহাতে গৃহস্বামী বলেন, “মহাশয়, যে দশ টাকা প্রদান করিয়া থাকেন, তাহাতে আতি কষ্টে আমাদের দিনপাত হয়; ছেলের জন্য দুগ্ধ ক্রয় করা ঐ টাকায় কুলায় না। দুগ্ধ খাইতে না থাইয়া, ছেলেটি দিন দিন শীর্ণ হইতেছে।” ইহা শুনিয়া আরও মাসিক পাঁচ টাকা ঐ ছেলের দুধের জন্য স্বতন্ত্র দিতেন। এক্ষণে ঐ পরিবারের অবস্থা ভাল হইয়াছে। এ বিষয়টী দাদার আত্মীয়, বাবু ছক্কনলাল সিংহ মহাশয়ের পুত্র, বাবু মণিলাল রায় ও বাবু বিনোদবিহারী সিংহ মহাশয়ের নিকট অবগত হইয়াছি। দাদা, দান করিয়া কাহাকেও তাহা ব্যক্তি করিতেন না।

 মাইকেল মধুসুদন দত্ত বাঙ্গালাভাষায় মেঘনাদবধ প্রভৃতি কয়েকখানি পুস্তক রচনা করিয়া, সাধারণের নিকট কবি বলিয়া প্রসিদ্ধ হইয়াছেন। তিনি কলিকাতা পুলিসের ইণ্টারপিটারের পদ পরিত্যাগ করিয়া, বারিষ্টার হইবার মানসে বিলাত যাত্রা করেন। যাইবার প্রাক্কালে তাঁহার কোন সম্ভ্রান্ত আত্মীয়ের হস্তে যাবতীয় সম্পত্তি গচ্ছিত রাখিয়া প্রস্থান করেন। কিয়দ্দিবস পরে বিলাতে তাঁহার টাকার আবশ্যক হইলে, তাঁহার সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ককে পত্র লিখেন। দুর্ভাগ্যপ্রযুক্ত তাঁহারা প্রত্যুত্তরে কোন পত্র লিখেন নাই। টাকার জন্য তথায় তাঁহার কারাবাস হইবার সম্ভাবনা দেখিয়া, অগত্যা দয়াময় অগ্রজকে বিনীতভাবে পত্র লিখেন। তিনি তাঁহার ঐরূপ পত্র পাইয়া, ৬০০০৲ ছয় সহস্র টাকা ঋণ করিয়া বিলাত পাঠান। মাইকেল মধুসুদন দত্ত, দাদার প্রেরিত আশাতীত প্রচুর টাকা পাইয়া, অপরিসীম হর্ষপ্রাপ্ত হইলেন এবং ঋণপরিশোধপূর্ব্বক বারিষ্টার হইয়া, সপরিবারে স্বদেশাভিমুখে যাত্রা করিলেন। কলিকাতায় উপস্থিত হইয়া, বারিষ্টারের কার্য্যে প্রবৃত্ত হইলেন। তৎকালে ব্যয়নির্ব্বাহার্থ ক্রমশঃ কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় আরও দুই সহস্র টাকা অগ্রজের নিকট গ্রহণ করেন। দুঃখের বিষয় এই যে, স্বল্পদিনের মধ্যেই