পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৭১

দর্শন ও কোষ্ঠীর গণনা ঐক্য হইল দেখিয়া, পিতৃদেবের অত্যন্ত দুর্ভাবনা হইল। তদবধি তাঁহারা আর দেশে থাকিতে ইচ্ছা রহিল না। কয়েক দিন পরে কাশীবাস করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন; সুতরাং আমি অগ্রজ মহাশয়কে ঐ সংবাদ লিখিলাম। তিনি তৎকালে রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহের পীড়া উপলক্ষে মুরশিদাবাদের সন্নিহিত কান্দীগ্রামে অবস্থিতি করিতেছিলেন। পত্রপ্রাপ্তিমাত্রেই অগ্রজ মহাশয়, তদুত্তরে আমায় যাহা লিখেন, তাহা নিয়ে প্রকাশিত হইল।

 “তিনি বিদেশে একাকী অবস্থিতি করিবেন, তাহা কোন ক্রমেই পরামর্শসিদ্ধ নহে; সমুদায় আহরণ করিয়া আপনার আহারাদি নির্ব্বাহ করিবেন, তাহাতে কষ্টের একশেষ হইবে। যে ব্যক্তির পুত্র-পৌত্রাদি এত পরিবার, তিনি শেষ-বয়সে একাকী বিদেশে কালাহরণ করিবেন, ইহা অপেক্ষা দুঃখ ও আক্ষেপের বিষয় কি হইতে পারে? সুতরাং এ অবস্থায় তিনি একাকী কাশীতে বাস করিবেন, ইহা আমি কোনও মতে সহ্য করিতে পারিব না। সেরূপ করিলে তাঁহার কষ্টের সীমা থাকিবে না। যদি তাঁহার সেবা ও পরিচর্য্যার নিমিত্ত কেহ কেহ সঙ্গে যাইতে পারেন, তাহা হইলেও আমি কথঞ্চিৎ সম্মত হইতে পারি; নতুবা তাঁহাকে একাকী পাঠাইয়া দিয়া, আমরা এখানে নিশ্চিন্ত হইয়া, সুখে কালযাপন করিব, ইহা কোনও ক্রমেই ধর্ম্ম-সঙ্গত নহে। অন্যের কথা বলিতে পারি না, আমি কোনও মতেই আমার মনকে দায়বোধ দিতে পারিব না; যদি নিতান্তই তাঁহার যাইবার মানস হইয়া থাকে, তবে এইরূপ তাড়াতাড়ি করিলে চলিবে না। তুমি তাঁহার চরণারবিন্দে আমার প্রণিপাত জানাইয়া কহিবে যে, পাছে আমার মনে দুঃখ হয়, এই খাতিরে তিনি অনেকবার অনেক কষ্ট সহ্য করিয়াছেন, এক্ষণেও সেই খাতিরে আর কিছু কষ্ট সহ্য করুন; আমি সত্বর বাটী যাইবার চেষ্টায় রহিলাম। সেখানে পঁহুছিলে পরামর্শ করিয়া কর্ত্তব্য স্থির করিব; নতুবা অকস্মাৎ এরূপে সংসার ত্যাগ করিয়া যাইলে এবং উপযুক্ত বন্দোবস্ত না করিলে, আমি মর্ম্মান্তিক