পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

ছিলেন। ঐ রূপ বিদ্যালয়-গৃহ ও ঐরূপ লাইব্রেরী মফঃস্বলে দৃষ্ট হয় না। পারিতোষিক-প্রদান-কালে অগ্রজ মহাশয় স্বয়ং উপস্থিত থাকিতেন। দাদাকে কোথাও বক্তৃতা করিতে শুনা যায় নাই; কিন্তু ঐ স্থানে অনেকের অনুরোধে মনের ভাব লিখিয়া দিয়াছিলেন, ঐ লেখা অপরে পাঠ করিয়াছিলেন। ঐ বক্তৃতা তৎকালে সংবাদ-পত্রে প্রচারিত হইয়াছিল।

 খৃঃ ১৮৬৬ সালে যখন রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ উৎকট রোগে আক্রান্ত হইয়া, কান্দী রাজভবনে কার্ত্তিক মাস হইতে মাঘ মাস পর্য্যন্ত অবস্থিতি করেন, তৎকালে অগ্রজ মহাশয়, রাজার রীতিমত চিকিৎসার জন্য কলিকাতার বিখ্যাত ডাক্তার সি, আই, ই, বাবু মহেন্দ্রনাথ সরকারকে মাসিক সহস্ৰ মুদ্রা বেতনে নিযুক্ত করিয়া ও সমভিব্যাহারে লইয়া কান্দী গমন করেন। অগ্রজ মহাশয়, উক্ত চারি মাসের মধ্যে বিশেষ প্রয়োজনবশতঃ দুই তিন বার তথা হইতে বাটী আগমন করেন এবং আট দশ দিন বাটীতে অবস্থিতি করিয়া, পুনর্ব্বার তথায় গমন করেন। উক্ত রাজাদিগকে তিনি সহোদর-সদৃশ স্নেহ করিতেন বলিয়া, এতদূর নিঃস্বার্থভাবে তাঁহার জীবন-রক্ষার জন্য আন্তরিক যত্ন করিয়াছিলেন। ধনশালী সম্ভ্রান্ত লোকের মধ্যে রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ বাহাদুর যেরূপ বিনয়ী ও ভদ্রলোক ছিলেন, সেরূপ প্রায় দৃষ্টিগোচর হয় না। ইনি সৌজন্যাদি গুণসমূহে সাধারণ মানবগণকে বশীভুত করিয়াছিলেন।

 রাজা, কাশীপুরের গঙ্গাতীরে মৃত্যুর পূর্ব্বে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে স্বীয় সমস্ত সম্পত্তির তত্ত্বাবধানজন্য একমাত্র ট্রষ্টী নিযুক্ত করিবার অভিপ্রায় প্রকাশ করিয়াছিলেন; কিন্তু অগ্রজ মহাশয় নানা কারণে রাজার প্রস্তাবে সম্মত হইলেন না; তজ্জন্য তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হইয়াছিলেন।

 রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহের মৃত্যুর পর, বিষয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাঁহার পিতামহী রাণী কাত্যায়নী অতিশয় ভাবিত হইয়াছিলেন। ইতস্ততঃ নানাপ্রকার চিন্তা করিয়া, কলিকাতাস্থ অনেক ধনশালী সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদিগকে আনাইলেন, কিন্তু ঐ সকল ব্যক্তিদিগের পরস্পর নানা তর্ক-বিতর্কের পর