পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৭৫

কোন বিষয়ের স্থিরীকরণ না হওয়ায়, রাণী কাত্যায়নী, অগ্রজকে আনাইয়া বলিলেন, “বিদ্যাসাগর বাবা, আমাকে এরূপ গোলযোগে ও বিপদে পতিত হইতে দেখা তোমার উচিত নহে। অতএব আমার এই বিপদের সময় আমাদিগকে কি করিতে হইবে, সেই সমস্ত নিৰ্দ্ধারণ করিয়া, যাবতীয় বিষয়ের কর্ত্তব্য নিৰ্দ্ধারণ করা তোমার অবশ্য-কর্ত্তব্য কর্ম্ম। অতএব তুমি বিলম্ব না করিয়া, অনন্যমনা ও অনন্যকর্ম্ম হইয়া সত্বর কার্য্যে প্রবৃত্ত হও। আমার এই উক্তির অপেক্ষা না করিয়া, এ কার্য্যে প্রবৃত্ত হওয়াই তোমার উচিত ছিল। তোমাকে এরূপ কথা আর না বলিতে হয়, ইহা যেন তোমার মনে থাকে।” ইহা শ্রবণ করিয়া তিনি বলিলেন, “প্রতাপচন্দ্রের মৃত্যুতে আমার মন স্থির না থাকায় এরূপ হইয়াছে, তজ্জন্য কিছু মনে করিবেন না; সত্বর যাহাতে সুবন্দোবস্ত হয়, আদ্যাবধি তদ্বিষয়ে প্রবৃত্ত হইলাম। যদিও আপনি বরাবর আমার প্রতি স্নেহ, মমতা ও বিশ্বাস করিয়া আসিতেছেন, তথাপি কি জানি সময়দোষে আমার প্রতি দ্বিধা করিয়া, পাছে অপরের কথায় কর্ণপাত করিয়া গোলমাল করেন, এই আশঙ্কায়, আপনাকে অনুরোধ করিতেছি, অন্য কোনও ব্যক্তির কথায় কর্ণপাত করিবেন না ও বিচলিত হইবেন না। কারণ, তাহা হইলে কার্য্যক্ষতি হইবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা।” তাঁহার এই কথা শ্রবণ করিয়া রাণী বলিলেন, “বিদ্যাসাগর বাবা! আমি অন্যের কথায় তোমার প্রতি অবিশ্বাস করিয়া, আমার নাবালক প্রপৌত্রদিগের কি সর্ব্বনাশ করিব? ইহা তুমি কদাচ মনে করিও না। তোমার যেরূপ ইচ্ছা ও বিবেচনা হয়, আমি তদনুসারে কার্য্য করিব; তদ্বিষয়ে আমি স্থির রহিলাম।”

 এই সকল কথাবার্ত্তার পর, অগ্রজ মহাশয়, আইন-পারদর্শী পরমবন্ধু দ্বারকানাথ মিত্র মহাশয়ের সহিত পরামর্শ করিয়া, পাইকপাড়া ষ্টেট্, কোর্ট অব ওয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে সমর্পণ করা যুক্তিযুক্ত স্থির করিয়া, তৎকালীন লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণর সার সিসিল বীডন মহোদয়ের সদনে গমন করিলেন। দুই এক বিষয়ের কথোপকথনের পর, পাইকপাড়ার রাজষ্টেটের