পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

শিশুচরিত।

 ১৭৪২ শকাব্দঃ অর্থাৎ সন ১২২৭ সালের ১২ই আশ্বিন মঙ্গলবার দিবা দ্বিপ্রহরের সময় জ্যেষ্ঠাগ্রজ ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় ভূমিষ্ঠ হন। তীর্থক্ষেত্র হইতে সমাগত পিতামহ রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, নাড়ীচ্ছেদনের পূর্বে আল্‌তায় এই ভূমিষ্ঠ বালকের জিহ্বা‌র নিয়ে কয়েকটী কথা লিখিয়া, তাঁহার পত্নী দুর্গাদেবীকে বলেন, লেখার নিমিত্ত শিশুটা কিয়ৎক্ষণ মাতৃদুগ্ধ পান করিতে পায় নাই; বিশেষতঃ কোমল জিহ্বা‌য় আমার কঠোর হস্ত দেওয়ায়, এই বালক কিছুদিন তোত্লা‌ হইবে। এই বালক ক্ষণজন্মা, অদ্বিতীয় পুরুষ ও পরম দয়ালু হইবে এবং ইহার কীর্ত্তি দিগন্তব্যাপিনী হইবে। এই বালক জন্মগ্রহণ করায়, আমার বংশের চিরস্থায়ী কীর্ত্তি থাকিবে। ইহাকে দেখিয়া আমি চরিতার্থ হইলাম। এই বালককে অপর কেহ যেন মন্ত্র না দেয়; অন্য হইতে আমিই ইহার অভীষ্টদেব হইলাম। এ বালক সাক্ষাৎ ঈশ্বরতুল্য, অতএব ইহার নাম অদ্য হইতে আমি ঈশ্বরচন্দ্র রাখিলাম। আজ রামজয় তীর্থক্ষেত্রের সেই স্বপ্নকে সত্য জ্ঞান করিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র যৎকালে গর্ভে ছিলেন, তৎকালে জননী ভগবতী দেবী দশমাস উন্মত্তার ন্যায় ছিলেন। পিতামহী দুর্গাদেবী, বধূর রোগোপশমের জন্য কতই প্রতীকার করিয়াছিলেন, কিন্তু কিছুতেই উপশম হয় নাই। তৎকালে কোন কোন বৃদ্ধ স্ত্রীলোক, পিতামহী ও মাতামহীকে বলিতেন, ভূতে পাইয়াছে; আবার কেহ কেহ বলিতেন, ডাইনি পাইয়াছে। এই সকলের রোজা আনাইয়া দেখান হয়, কিন্তু কিছুতেই উপশম হয় নাই। অবশেষে উদয়গঞ্জনিবাসী পণ্ডিতপ্রবর ভবানন্দ শিরোমণি ভট্টাচার্য্য মহাশয়কে দেখান হয়। তিনি এ প্রদেশের মধ্যে চিকিৎসা ও গণিতশাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন; রোগের তথ্যানুসন্ধানবিষয়ে তাহার বিশিষ্টরূপ ক্ষমতা ছিল। ইনি রোগনির্ণয়ের পূর্বে রোগীর কোষ্ঠী গণনা করিতেন। ইনি পিতামহীকে বলেন, আমি তোমার বধূমাতার রোগনির্ণয় করিলাম,