পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিশুচরিত।
১৫

এক্ষণে ইহাঁর কোষ্ঠী দেখিতে ইচ্ছা করি। চিকিৎসক ভট্টাচার্য মহাশয় উক্তরূপ কথা বলিলে, দুর্গাদেবী তাঁহার কোষ্ঠী দেখিতে দিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ভবানন্দ গণনা করিয়া বলিলেন, ইহার কোন রোগ নাই; ঈশ্বরানুগৃহীত কোন মহাপুরুষ ইহাঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তাঁহার তেজঃপ্রভাবে এরূপ হইতেছে, কোনরূপ ঔষধ সেবন করাইবেন না। গর্ভস্থ বালক ভূমিষ্ঠ হইলেই ইনি রোগমুক্তা হইবেন। ভবানন্দ ভট্টাচার্য্য় মহাশয় যাহা বলিয়াছিলেন, তাহাই ঘটিল। প্রসবের পরক্ষণেই তাঁহার আর কোন উন্মাদ-চিহ্ন লক্ষিত হইল না। একারণ, পিতামহী সর্ব্বদা ভবানন্দ ভট্টাচার্য্য়ের গণনার ভূয়সী প্রশংসা করিতেন।

 জ্যেষ্ঠাগ্রজ ভূমিষ্ঠ হইবার কিয়ৎক্ষণ পূর্ব্বে, পিতৃদেব দ্রব্যাদি ক্রয় করিবার জন্য অতি সন্নিহিত কুমারগঞ্জের হাটে গিয়াছিলেন। তথা হইতে বাটীতে আসিতেছেন দেখিয়া, পিতামহ রামজয় কিছু অগ্রসর হইয়া বলিলেন, ঠাকুরদাস! অদ্য আমাদের একটী এঁড়ে বাছুর হইয়াছে। তৎকালে আমাদের একটী গাভীও গর্ভিণী হইয়াছিল। পিতৃদেব মনে করিলেন, গর্ভবর্তী গাভীটি প্রসব হইয়াছে; কিন্তু বাটী প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, গাভী প্রসব হয় নাই। তখন পিতামহ ঈষৎ হাস্যবদনে সূতিকাগৃহে প্রবেশ করিয়া, অগ্রজকে দেখাইয়া বলিলেন, এ ছেলে এঁড়ের মত বড় একগুঁয়ে হইবে, একারণ এঁড়ে বাছুর বলিলাম। ইহার দ্বারা পরে দেশের বিশেষরূপ উপকার হইবে। তুমি ইহাকে সামান্য এঁড়ে জ্ঞান করিবে না, এ নিজের জিদ্‌ বজায় রাখিবে, এবং সর্ব্বত্র জয়ী হইবে; আজ আমার স্বপ্নদর্শন সত্য হইল। কিয়ৎক্ষণ পরে গ্রহবিপ্র-শ্রেষ্ঠ কেনারাম আচার্য্য় আসিয়া, বালকের ঠিকুজী প্রস্তুত করিলেন। আচার্য্য়, গণনার দ্বারা ব্যক্ত করিলেন, এই বালক ক্ষণজন্মা; উচ্চগ্রহ সকল প্রত্যক্ষ পরিদৃশ্যমান হইতেছে, এরূপ ফল কাহারও কোষ্ঠীতে অদ্যাপি দেখিতে পাই নাই। এ বালক জগদ্বিখ্যাত, নৃপতুল্য ও দয়াময় হইবে, এবং দীর্ঘায়ু হইয়া নিরন্তর ধন ও বিদ্যাদান করিয়া, সাধারণের কষ্ট নিবারণ করিবে।