পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

করিল। যাহারা পেটের জ্বালায় দেশ ত্যাগ করিয়া কলিকাতায় প্রস্থান করিয়াছিল, তাহাদিগকে গবর্ণমেণ্ট পথখরচাদি প্রদানপূর্ব্বক দেশে পাঠাইয়া দেন।

 অগ্রজ মহাশয়, নিজ জন্মভূমি বীরসিংহ ও তৎসংলগ্ন পাথরা, কেঁচে, অৰ্জ্জুনআড়ী, বুয়ালিয়া, কৌমারসা, রাধানগর, উদয়গঞ্জ, কুরাণ, মামুদপুর প্রভৃতি কয়েকখানি গ্রামবাসী নিরুপায় লোকের প্রতি দয়া করিয়া, বীরসিংহায় অন্নসত্র স্থাপন করেন। প্রথমে কাষ্ঠ-সংগ্রহের এই বন্দোবস্ত হয় যে, তিনজন করাতি প্রত্যহ তেঁতুল গাছ ক্রয় করিয়া ছেদন করিবে ও বার জন মজুর কাষ্ঠ চেলাইবে। বার জন ব্রাহ্মণ প্রাতঃকাল হইতে ক্রমিক খেচরান্ন পাক করিবে; কুড়ি জন স্কুলের ছাত্র ও স্থানীয় ভদ্রলোক পরিবেশন করিবে। দুইজন ভদ্রলোক ও দুইজন দ্বারবান্ প্রত্যহ ঘাঁটাল হইতে চাউল, ডাউল, লবণ ক্রয় করিয়া আনয়নজন্য নিযুক্ত হইল। আৰ্দ্ধমণ চাউল-ডাউলের খেচরান্ন পাক হইতে পারে, এরূপ চারিটি বড় পিতলের হাঁড়া রাধানগরের চৌধুরী বাবুদের বাটী হইতে আনীত হয়, এবং কলিকাতা হইতেও বড় বড় কটাহ ও পিতলের হাড়ী আনীত হইয়াছিল। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস পর্য্যন্ত যাহারা নিজবাটীতে ভোজন করিত, অতঃপর তাহাদিগকে বাটীতে ভোজ্যদ্রব্য না দিয়া, অন্নসত্রে ভোজনের আদেশ দেওয়া হইল। প্রথমতঃ গ্রামস্থ লোকদিগের ভোজন করিবার এই ব্যবস্থা হয় যে, যে ভদ্রলোক অন্নসত্রে ভোজন করিতে কুষ্ঠিত হইবেন, তাঁহারা লোকসংখ্যা হিসাবে সিদা পাইবেন। অগ্রজ মহাশয়, স্বয়ং এরূপ সিন্দার ব্যবস্থা করিয়া দিয়া, কলিকাতা প্রস্থান করেন। শ্রাবণমাসে যৎকালে স্বতন্ত্র বাটীতে অন্নসত্র স্থাপিত হয়, ঐ সময়ে গ্রামস্থ লোকই ভোজন করিতে পায়। ভাদ্রমাস হইতে রাধানগর, কেঁচে, অৰ্জ্জুন-আড়ী, কৌমারসা প্রভতি চতুর্দ্দিকের লোক আসিয়া ভোজন করায়, ক্রমশঃ লোকসংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল। এই সমাচার কলিকাতায় অগ্রজ মহাশয়কে বিস্তারিতরূপে লেখা হয়, তদুত্তরে তিনি লিখেন, “অভুক্ত যুত লোক আসিবে, সকলকেই