পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৮৯

সমাদরপূর্ব্বক ভোজন করাইবে; কেহ যেন অভুক্ত ফিরিয়া না যায়। ত্বরায় টাকা পাঠাইতেছি এবং আমিও সত্বর বাটী যাইতেছি।” যে কয়েক মাস দেশে অন্নসত্র ছিল, সেই সময়ে তিনি মাসে প্রায় একবার করিয়া বাটী আগমন করিতেন।

 অনেক নিরুপায় দরিদ্র লোক, ছোট ছোট বালকবালিকাগণকে ঐ অন্নসত্রে ফেলিয়া, স্থানান্তরে প্রস্থান করে। ঐ বালকবালিকাগণের রক্ষণবেক্ষণজন্য কয়েকজন লোক নিযুক্ত করা হয়। দশ মাসের গর্ভবতী কয়েকটি স্ট্রীলোক প্রত্যহ ভোজন করিত। অনেকের অনুরোধে পড়িয়া, উহাদের সাধ দেওয়া হয়। ঐ সাধ-ভক্ষণ-দিবস অন্নসত্রের সকলকেই দধি, মৎস্য, পায়স, মিষ্টান্ন প্রভৃতি ভোজন করান হয়। প্রসবের পর ঐ নবপ্রসূত সন্তানের দুগ্ধ ও প্রসুতিদের পথ্যের ব্যবস্থা হয়। কিছু দিনের পর, ঐ প্রসুতিদের মধ্যে একটি মৃত্যুমুখে নিপতিত হইলে, উহার ছেলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক নিযুক্ত হয়। ঐ সন্তানের ক্রমিক সতর বৎসর বয়ঃক্রম পর্য্যন্ত সমস্ত ব্যয় নির্ব্বহ করা হইয়াছিল। বিদেশীয় কয়েকজন লোক ভোজন করিতে করিতে অন্নসত্রে প্রাণত্যাগ করে, কিন্তু এক পক্তিতে উভয় পার্শ্বের লোক মৃতদেহ প্রত্যক্ষ অবলোকন করিয়াও, কেহ ঘূণা বা অশ্রদ্ধা করিয়া ভোজন করিতে ক্ষান্ত হয় নাই। ত্বরায় ঐ মৃতদেহ অপসারিত করা হইল। অন্নসত্র খুলিবার প্রথমাবস্থায় দেখা গিয়াছে যে, কেহ কেহ স্বীয় প্রাণসম সন্তানগণের হস্ত-ধারণপূর্ব্বক, স্বয়ং সমস্ত খাইয়া ফেলিত; তৎকালে কেহ কাহারও প্রতি স্নেহ-মমতা করিত না, সকলেই সতত স্বীয় স্বীয় উদরের জ্বালায় বিব্রত ছিল। কিছুদিন পরে ঐ ভাব তিরোহিত হইয়াছিল। অন্নসত্রে ভোজনকারিণী স্ত্রীলোকদের মস্তকের কেশগুলি তৈলাভাবে বিরূপ দেখাইত। অগ্রজ মহাশয় তাহা অবলোকন করিয়া, দুঃখিত হইয়া তৈলের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন, প্রত্যেককে দুই পালা করিয়া তৈল দেওয়া হইত। যাহারা তৈল বিতরণ করিত, তাহারা, পাছে মুচি, হাড়ী, ডোম প্রভৃতি অপকৃষ্ট জাতীয় স্ত্রীলোককে স্পর্শ করে, এই আশঙ্কায়