পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

 যৎকালে অগ্রজ মহাশয় সংস্কৃত-কলেজের প্রিন্সিপাল-পদে নিযুক্ত ছিলেন, তৎকালে নানাকারণে ষোল দিন রাত্রিতে নিদ্রা হয় নাই, সমস্ত রাত্রি ছাদে বেড়াইতেন। তাঁহার পরমবন্ধু বাবু দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, অনেক য়্যালোপাথি ঔষধ সেবন করান, তথাপি নিদ্রা হইল না। অবশেষে অগ্রজের পরমবন্ধু, তৎকালের কবিরাজশ্রেষ্ঠ ৺হারাধন বিদ্যারত্ন কবিরাজ মহাশয়, মধ্যম-নারায়ণ তৈল ও ঔষধের ব্যবস্থা করেন এবং প্রায় দুই ঘণ্টা কাল তৈল মর্দ্দন করাইবে, এইরূপ বলিয়া দেন। দুই তিন দিন তৈল মাখাইলে পর, এক দিন তৈল মাখাইয়া গাত্র দলন করিতেছে, অমনি নিদ্রাকর্ষণ হইল; তজ্জন্য তিনি হারাধন কবিরাজ মহাশয়কে আন্তরিক ভক্তি করিতেন। অন্যান্য আত্মীয়লোকের পীড়া হইলে, উক্ত কবিরাজ মহাশয়ের নিকট প্রেরণ করিাতেন। যে সকল লোককে কবিরাজ মহাশয়ের নিকট পাঠাইতেন, তিনিও সেই সকল লোককে বিনা ভিজীটে দেখিতেন এবং বহুমূল্য ঔষধও প্রদান করিতেন। সন ১২৭২ সালে একবার উদরাময়ে ও উদরের বেদনায় কষ্ট পান; একারণ কবিরাজ মহাশয় আদেশ করেন যে, যবের গাছ পোড়াইয়া এক বস্তা ছাই প্রেরণ করিলে, তাহা হইতে লবণ বাহির করিব; সেই লবণে যে ঔষধ প্রস্তুত হইবে, তাহাতে উপকার দর্শিব। একারণ, দেশ হইতে যবের ভস্ম আনাইয়া দেওয়া হয়; তদ্বারা যে ঔষধ প্রস্তুত হইয়াছিল, তাহা সেবনে তৎকালে উদরের পীড়ার অনেক লাঘব হয়।

 রাজা দিনকর রাও কলিকাতায় আসিলে, অগ্রজ মহাশয় তাহাকে বেথুন সাহেবের স্থাপিত বালিকাবিদ্যালয় দেখাইতে লইয়া যান। তিনি দেখিয়া তুষ্ট হইয়া, বালিকাগণকে মিষ্টান্ন খাইতে তিনশত টাকা দেন। তৎকালে সার সিসিল বীডন সাহেব মহোদয় বলেন, অত টাকার মিষ্টান্ন খাইলে ইহাদের উদরাময় হইবে। তজ্জন্য অগ্রজ মহাশয়, ঐ টাকায় সকল বালিকাকে ঢাকাই সাটী ক্রয় করিয়া দেন। দুইখান বস্ত্র অধিক হইল দেখিয়া, তিনি দুই পণ্ডিতকে প্রদান করেন। ঐ সময়ে দিনকার রাও, অগ্রজকে জিজ্ঞাসা করেন,