পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৯৫

তিনি উত্তর করেন যে, এ বিষয়ে আমি কাহারও অনুরোধ রক্ষা করিব না। যাহাতে নিরুপায় পতিপুত্রবিহীনা স্ত্রীলোক স্বীয় ভূমিসম্পত্তি পুনর্গ্রহণে সমর্থ হন, আমি তদ্বিষয়ে আন্তরিক যত্নবান্ হইব। ঐ স্ত্রীলোকের জন্য আমাকে যদি সকল কার্য্য পরিত্যাগ করিতে হয়, আমি তাহাতেও সম্মত আছি; তথাপি ঐ অসহায়া স্ত্রীলোকটির পক্ষ কদাচ পরিত্যাগ করিতে পারিব না। ইহা শুনিয়া উপস্থিত সকলে আশ্চর্য্যান্বিত হইলেন যে, বিদ্যাসাগর মহাশয় অদ্য একটি দরিদ্রা স্ত্রীলোকের রোদনে এমন মুগ্ধ হইয়াছেন যে, গুরুতর লোকের উপরোধ রক্ষা করিলেন না। ঐ দরিদ্রার প্রতি ইঁহার অদ্ভুত দয়ার সঞ্চার হয়। আমরা মনে করিয়াছিলাম, এবার ঐ আত্মীয়েরা ভয়ে ঐ স্ত্রীলোকের জমি পরিত্যাগ করিবেন, কিন্তু উহারা তাহা না করিয়া পূর্ব্বপেক্ষা উহার প্রতি আরও শত্রুতা করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। তজ্জন্য অগ্রজ মহাশয়, নায়েবকে অনুরোধ করেন। অগ্রজের আদেশ পাইয়া, নায়েব পরম আহ্লাদিত হইয়া তাহাদিকে ডাকাইয়া বলেন যে, তাঁহারা উত্তরকালে ঐ স্ত্রীলোকটির কোন সম্পত্তি বলপূর্ব্বক অধিকার করিতে না পারেন। অবশেষে তাহারা অগত্যা তাহাদের কুটুম্ব মহাশয়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাহারা ঐ ভূমির তালুকদার বাবুদের কুটুম্ব; সুতরাং ঐ কুটুম্বেরা অবীরাকে ঐ ভূমি হইতে বেদখল করিবার জন্য যত্ন পাইতে লাগিলেন। আবীরার প্রমুখাৎ উক্ত সংবাদ শ্রবণ করিয়া, অগ্রজ মহাশয় তালুকদার বাবুকে পত্র লিখেন। উক্ত পত্র পাইয়াও তিনি পক্ষাবলম্বন করিয়া অবীরাকে বেদখল করিয়া, ধান্য রোপণ করিতে আন্তরিক যত্নবান্ হন। তাহাতে অসহায়া বিধবা ৭৪ সালের আষাঢ় মাসে কলিকাতায় যাত্রা করেন এবং তথায় অগ্রজ মহাশয়কে আদ্যন্ত নিবেদন করিলে পর, তিনি আমায় পত্র লিখেন। ঐ পত্র লইয়া অবীরা জাহানাবাদে প্রস্থান করেন। কিন্তু মোক্তারগণ বলেন, বেদখল হইতে দেওয়া হইবে না, সাবেক দখল বজায় রাখিতে হইবে, সুতরাং বাটী প্রত্যাগমন করেন। আসিয়া দেখিলেন, বিদ্যাসাগর মহাশয় বাটী আগমন করিয়াছেন।