সালগিরার সময় নিমন্ত্রিত তৎকালের বিখ্যাত বাবু রামগোপাল ঘোষ ও ভূকৈলাসের রাজা সত্যচরণ ঘোষাল মহোদয়েরা যৎকালে বৰ্দ্ধমান যাত্রা করেন, ঐ সময় তাঁহাদের সহিত অগ্রজ মহাশয়ও বৰ্দ্ধমান-দর্শনমানসে গমন করিয়াছিলেন। তথায় উপস্থিত হইয়া তিনি প্রথমতঃ তাঁহাদের বাসায় অবস্থিতি করেন। কিয়ৎক্ষণ পরে রাজবাটী হইতে তাঁহাদের সিদ আসিল, এবং উহাঁদের সঙ্গে কত লোক আসিয়াছেন গণনা করিয়া ভোজনের দ্রব্যাদি দেওয়া দেখিয়া, অগ্রজ প্রকাশ্যভাবে বলেন যে, আমি তোমাদের বাসায় অবস্থিতি বা ভোজন করিব না; এই বলিয়া বাবু প্যারীচরণ মিত্রের ভবনে প্রস্থান করেন। তথায় তাঁহার বাটীতে মধ্যাহ্ন-কার্য্য সমাপন করিয়া উপবিষ্ট আছেন, এমন সময়ে রাজবাটীর লোক আসিয়া বলিল, “মহাশয়! বৰ্দ্ধমানাধিপতি বাহাদুর আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিবার মানসে আমাদিগকে পাঠাইয়াছেন। অতএব আপনি অনুগ্রহপূর্ব্বক রাজবাটী গমন করুন।” তাহদের কথা শুনিয়া, অগ্রজ উত্তর দেন যে, এসময় তাঁহার বাটীতে কার্য্যোপলক্ষে নানা স্থানের লোক উপস্থিত হইয়াছেন। একারণ এসময় রাজবাটী যাইতে ইচ্ছা করি না। রাজকর্ম্মচারীরা এই সংবাদ রাজার কর্ণগোচর করিলে, রাজা পুনর্ব্বার কয়েক জন সম্ভ্রান্ত লোককে অগ্রজের নিকট প্রেরণ করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়, ঐ কয়েক জন সম্ভ্রান্ত লোকের অনুরোধে অগত্য রাজবাটীতে গমন করেন। রাজা, অগ্রজ মহাশয়কে অবলোকন করিয়া বলেন, “আপনি অতি বিখ্যাত লোক ও সুপণ্ডিত। লাট সাহেব প্রভৃতি আপনাকে অত্যন্ত সম্মান করিয়া থাকেন।” রাজা, প্রায় দুই ঘণ্টাকাল নানা বিষয়ের গল্প করিলেন; অবশেষে অগ্রজ মহাশয় বিদায় লইলেন। রাজা ৫০০৲ টাকা ও এক জোড়া শাল বিদায় দেন। তাহা দেখিয়া দাদা বলিলেন, “আমি কখন কাহারও নিকট দান গ্রহণ করি না। কলেজে গবর্ণমেণ্ট প্রদত্ত যাহা বেতন পাইয়া থাকি, তাহাতে আমার সাংসারিক ব্যয় নির্ব্বাহ হইয়া থাকে। যাহারা টোল করিয়া শিক্ষা দেন, তাঁহাদের পক্ষে এরূপ বিদায় গ্রহণ করা উচিত।” ইহা শুনিয়া রাজা
পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২০১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৯৭