পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

তথাপি তাহাদিগকে অকারণ একটা কার্য্যের ভার প্রদান করিতেন এবং ঐ সকল লোকের মাসিক বেতন ধার্য্য করিতেন।

 কয়েক দিবস বাটীতে অবস্থিতি করিয়া, পুনর্ব্বর বর্দ্ধমানে যাত্রা করিতেন। বৰ্দ্ধমানে প্যারীবাবুর বাটীতে প্রায় এক মাস অবস্থিতি করিয়া, কিছু সুস্থ হইলেন দেখিয়া, বৰ্দ্ধমানধিরাজ-বাহাদুরের কমলসায়েরের পার্শ্বস্থ বাগানবাটীতে অবস্থিতি করেন। কমলসায়েরের চতুর্দ্দিকেই দরিদ্র নিরুপায় মুসলমানগণের বাস। এই পল্লীর বালক-বালিকাগণকে প্রতিদিন প্রাতে জলখাবার দিতেন। যাহাদের অন্নকষ্ট এবং পরিধেয় বস্ত্র জীর্ণ ও ছিন্ন দেখিতেন, তাহাদিগকে অর্থ ও বস্ত্র দিয়া কষ্ট নিবারণ করিতেন। এতদ্ভিন্ন কয়েক ব্যক্তিকে দোকান করিবার জন্য মূলধন দিয়াছিলেন। কি স্ত্রীলোক, কি পুরুষ, কি বালকবালিকা, সকলেই তাঁহাকে আপনার ঘরের লোকের মত মনে করিত ও আন্তরিক ভাল বাসিত, এবং পিতা ও বন্ধুর ন্যায় ভক্তি ও মান্য করিত। ঐ সময়ে অগ্রজ মহাশয়, কমলসায়েরের সন্নিহিত একটা মুসলমানকন্যার বিবাহের সমস্ত খরচ প্রদান করিয়াছিলেন।

 বৰ্দ্ধমান হইতে আসিবার কালে কোনও কোনও বারে হাজিপুরের দোকানে অবস্থিতি করিতেন। পাল্কী নামাইলেই, ঐ স্থানের বহুসংখ্যক দরিদ্র বালক, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সম্মুখে দণ্ডায়মান থাকিত। বিদ্যাসাগর মহাশয় বাল্যকাল হইতে ছোট ছোট বালকবালিকাগণকে আন্তরিক ভাল বাসিতেন। উপস্থিত প্রায় শতাধিক বালককে মিঠাই খাইতে কিছু কিছু প্রদান না করিয়া ক্ষান্ত থাকিতেন না। বালকেরা পয়সা পাইয়া পরম আহলাদিত হইয়া প্রস্থান কিরিত। তন্মধ্যে তামলিজাতীয় দ্বাদশবর্ষীয় একটী বালক চারিট পয়সা পাইয়া, সেই স্থানে দাঁড়াইয়া রহিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় ঐ বালককে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি এই চারিটী পয়সায় কি করিবে? তাহাতে সে উত্তর করিল, “এই পয়সায় বন্দীপুরের হাট হইতে আমি কিনিয়া এই হাজীপুরে বিক্রয় করিব; তাহা হইলে আট পয়সা হইবে। অদ্য এক পয়সার চাউল