পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিশুচরিত।
১৭

বিদ্যাভূষণ স্বীয় আবাসে অগ্রজ, মধ্যম ভ্রাতা ও জননীদেবীকে সমভিব্যাহারে লইয়া যান। তথায় খানাকুল কৃষ্ণনগরের সন্নিহিত কোঠারা গ্রামে যে সকল চিকিৎসাব্যবসায়ী বৈদ্য বাস করিতেন, তন্মধ্যে উৎকৃষ্ট চিকিৎসককে আনাইয়া শাস্ত্রমত চিকিৎসা করান হয়। রাধামোহন বিদ্যাভূষণের যত্নে ও কবিরাজ রামলোচনের সুচিকিৎসায়, অগ্রজ মহাশয় সে যাত্রা রক্ষা পান। বাল্যকাল্লে অগ্রজ মহাশয় জননীদেবীর সহিত মধ্যে মধ্যে পাতুলগ্রামে যাইতেন। রাধামোহন বিদ্যাভূষণ ও তাঁহার ভ্রাতৃবর্গ অগ্রজকে আন্তরিক ভাল বাসিতেন; তজ্জ‌ন্য অগ্রজ মহাশয় যাবজ্জীবন রাধামোহনের পরিবারসমূহকে যথেষ্ট স্নেহ ও শ্রদ্ধা করিয়া, মাসিক-ব্যয়-নির্ব্বা‌হার্থে বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন।

 প্রায় ছয় মাস পাতুলগ্রামে অবস্থিতি করিয়া, সম্পূর্ণরূপ আরোগ্যলাভপূর্বক, বীরসিংহায় আসিয়া তিনি পুনর্ব্বা‌র পাঠশালায় অধ্যয়নার্থ নিযুক্ত হন।

 বাল্যকালে অগ্রজ অত্যন্ত দুরন্ত ছিলেন। ৫/৬/৭/৮ বৎসর বয়ঃক্রমকালে প্রত্যুষে কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পাঠশালায়, যাইবার সময়, প্রতিবেশী অনুগত মথুরামোহন মণ্ডলের মাতা পার্ব্বতী ও পত্নী সুভদ্রাকে বিরুক্ত করিবার মানসে, প্রায় প্রত্যহ তাহাদের দ্বারে মলমূত্র ত্যাগ করিতেন। মথুরের পত্নী সুভদ্রা ও জননী পার্ব্বতী ঐ বিষ্ঠা প্রত্যহ স্বহস্তে পরিষ্কার করিতেন। যদি কোন দিন মথুরের পত্নী সুভদ্রা বিরক্ত হইয়া বলিত, দুষ্ট বামুন প্রত্যহই তুমি পাঠশালা যাইবার সময় আমার দ্বারে মল ত্যাগ করিবে? অতঃপর এরূপ গর্হি‌ত কার্য্য করিলে গুরুমহাশয় ও তোমার পিতামহীকে বলিয়া তোমাকে শাসন করাইব। ইহা শুনিয়া সুভদ্রার শ্বশ্রূ, বৌকে এই বলিয়া উপদেশ দিতেন যে, এই ছেলেটী সহজ নহে; ইহার পিতামহ ১২ বৎসর বিবাগী হইয়া তীর্থক্ষেত্রে জপ তপ করিয়া দিনপাত করিতেন। তিনি সাক্ষাৎ ঋষিতুল্য ছিলেন। তাঁহার মুখে শুনিয়াছি, এই বালক অদ্বিতীয়-শক্তিসম্পন্ন হইবে। অতএব তুমি বিরক্ত হইও না; আমি স্বয়ং ইহাঁর মলমূত্র পরিষ্কার করিব। ভবিষ্যতে ঐ বালক যে কে, তাহা জানিতে পরিবে।