পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

কেবল বিদ্যোৎসাহী ও বিধবাবিবাহের প্রবর্ত্তক। এখন দেশস্থ লোক ভালরূপ অবগত হইলেন যে, সকল বিষয়েই তিনি সমাদৃষ্টি-নিক্ষেপ করিয়া থাকেন। উক্ত কার্য্যে দুই মাস নিরন্তর লিপ্ত থাকায়, অগ্রজ মহাশয়ের দুই সহস্ৰাধিক টাকা ব্যয় হয়।

 ঘাঁটাল ইনকমট্যাক্সের তদন্ত-সময়ে, তথাকার মুনসেফ বাবু তারিণীচরণ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি, অগ্রজ মহাশয়কে সানুনয়ে এই নিবেদন করেন যে, আমাদের ঘাঁটালে একটি মাইনার ইংরাজী বিদ্যালয় আছে, আদ্যাপি স্কুল-গৃহ না থাকা প্রযুক্ত, আমরা চাঁদা করিয়া ইষ্টক-নির্ম্মিত বাটী প্রস্তুত করিতেছি। কিন্তু ৫০০৲ টাকার অসদ্ভাবপ্রযুক্ত বাটী-নির্ম্মাণ-কার্য্য সম্পন্ন হয় নাই। একারণ, অগ্রজ মহাশয় তৎকালে ঘাঁটাল স্কুল-গৃহ-নির্ম্মাণার্থে ৫০০৲ টাকা প্রদান করিয়াছিলেন। এরূপ দান দেখিয়া ও শুনিয়া, ঘাঁটাল-চৌকীর সম্ভ্রান্ত লোকেরা আহিলাদিত হইয়া বলিয়াছিলেন যে, “আমরা জমিদার, তথাপি দশ বার টাকার উৰ্দ্ধ সাহায্য করিতে সাহস করি নাই; কিন্তু বিদ্যাসাগর মহাশয় অকাতরে ৫০০৲ টাকা প্রদান করিলেন।”

 হেরিসন সাহেবের তদন্তকার্য্য সমাধা হইলে পর, অগ্রজ মহাশয়, হেরিসন সাহেবকে বীরসিংহস্থিত বাটীতে নিমন্ত্রণ করিয়া ভোজন করাইয়াছিলেন। জননীদেবী, সাহেবের ভোজনসময়ে উপস্থিত থাকিয়া, তাঁহাকে ভোজন করাইয়াছিলেন। তাহাতে সাহেব আশ্চর্য্যান্বিত হইয়াছিলেন যে, অতি বৃদ্ধ হিন্দু গ্রীলোক, সাহেবের ভোজনের সময় চেয়ারে উপবিষ্টা হইয়া কথাবার্ত্তা কহিতে প্রবৃত্ত হইলেন। উপস্থিত সকলে ও সাহেব পরম সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। সাহেব হিন্দুর মত জননীদেবীকে ভূমিষ্ঠ হইয়া মাতৃভাবে অভিবাদন করেন। তদনন্তর নানা বিষয়ে কথাবার্ত্তা হইল। জননীদেবী প্রবীণা হিন্দু স্ত্রীলোক; তথাপি তাঁহার স্বভাব অতি উদার, মন অতিশয় উন্নত এবং মনে কিছুমাত্র কুসংস্কার নাই। কি ধনশালী, কি দরিদ্র, কি বিদ্বান্, কি মুর্থ, কি উচ্চজাতীয়, কি নীচজাতীয়, কি পুরুষ, কি স্ত্রী, কি.হিন্দুধর্ম্মাবলম্বী, কি অন্যধর্ম্মাবলম্বী