পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

সর্বদা তাহাদের তত্ত্বাবধারণ করিতেন এবং ঐ বাস্তু ভিটা দেখিয়া রোদন করিতেন। সম্মুখে বর্ষাকাল, একারণ অগ্রজ মহাশয়, তাহার বাসার্থ সামান্য গৃহ প্রস্তুত করাইয়া দেন। বিদেশীয় যে সকল রোগিগণ চিকিৎসার জন্য আসিয়া বাটীতে অবস্থিতি করিত, স্বয়ং তাহাদের আবশ্যকীয় দ্রব্য পাক করিয়া দিতেন। যে সকল দরিদ্র প্রতিবেশীর বস্ত্র না থাকিত, সময়ে সময়ে তাহাদিগকে যথেষ্ট বস্ত্র ক্রয় করিয়া দিতেন, এবং সময়ে সময়ে অনেকের আপদবিপদে যথেষ্ট অর্থ প্রদান করিতেন। জননী-দেবীর দান-খয়রাতের জন্য যখন যাহা আবশ্যক হইত, অগ্রজ মহাশয় অবিলম্বে তাহা পাঠাইতেন। তিনি যাহাতে সন্তুষ্ট থাকেন, অগ্রজ মহাশয় সেই কার্য্য অবিলম্বে সম্পন্ন করিতেন। প্রতিবৎসরেই অগ্রজকে অনুরোধ করিয়া, বীরসিংহা বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রের ও অন্যান্য অনেক দীনদরিদ্রের কর্ম্ম করিয়া দিতেন। বৎসরের মধ্যে নুতন নূতন অনেক কুটুম্ব ও গ্রামস্থ অনাথগণের মাসহরা করাইয়া দিতেন। জননীদেবীর ও পিতৃদেবের স্বর্ণালঙ্কারের প্রতি বিলক্ষণ দ্বেষ ছিল; তাঁহারা প্রায়ই বলিতেন, “বাটীর স্ত্রীলোকদিগকে অলঙ্কার দিলে, বাটীতে ডাকাইতি এবং দস্যুর ভয় হইবে। স্ত্রীলোকদিগের মনে অহঙ্কারের উদয় হইবে, এবং তাহাদের গৃহস্থালীকার্য্যে সেরূপ যত্ন থাকিবে না, দীন-দরিদ্রদের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করিবে। অলঙ্কার না করিয়া, ঐ টাকায় যথেষ্ট অল্পব্যয় করিতে পারিব। তাহাতে দরিদ্র বালকেরা আমাদের বাটীতে ভোজন করিয়া লেখাপড়া শিখিতে পরিবে।” জননীদেবী, বাটীর স্ত্রীলোকদিগকে পাতলা কাপড় পরিধান করিতে দিতেন না। কখন কখন কলিকাতা হইতে পাতলা কাপড় গেলে, অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করিতেন। বাটীর স্ত্রীলোকদের জন্য মোটা বস্ত্র ক্রয় করিয়া দিতেন, এবং পাকাদি সাংসারিক কার্য্য করিবার জন্য সর্ব্বদা উপদেশ দিতেন। তিনি বিদেশীয় অনুপায় রোগীদের শুশ্রূষাদি কার্য্যে বিশেষরূপ যত্নবতী ছিলেন। কাহারও নিরামিষ ব্যঞ্জন, কাহারও মৎস্যের ঝোল প্রভৃতি স্বয়ং প্রস্তুত করিয়া দিতেন। তাঁহাকে এই কার্য্যে কখনও