পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২১১

বিরক্ত হইতে দেখা যায় নাই। বাটীর অন্যান্য স্ত্রীলোকেরাও এই সকল বিষয়ে মাতৃদেবীর অনুকরণ করিতেন। বিবাহিতা বিধবাদের মধ্যে কেহ পীড়িত হইয়া চিকিৎসার জন্য বাটীতে আসিলে, অথবা অপর কেহ রোগগ্রস্ত হইয়া উপস্থিত হইলে, জননী-দেবী তাহাদের মল-মূত্রাদি পরিষ্কার করিতেন; তাহাতে কিছুমাত্র ঘুণাবোধ করিতেন না। এ প্রদেশের অনেকেই প্রায় বলিয়া থাকেন যে, অগ্রজ মহাশয় বাল্যকাল হইতে জননী-দেবীর দয়া-দক্ষিণ্যাদি গুণ সকল অধিকার করিয়াছেন। জননীদেবী, পরের দুঃখাবলোকনে রোদন করিতেন, অগ্রজও সাধারণ লোকের শোকতাপ দেখিয়া রোদন করিতেন। অধিক কি, সামান্য শৃগাল কুকুর মরিলেও দাদার নেত্রজল বহির্গত হইত। গ্রামে বিদ্যালয় সংস্থাপনের পূর্ব্বে, গ্রামস্থ প্রায় সকল লোকই দরিদ্র ছিল, কেহ লেখাপড়া জানিত না, কেহ চাকরি করিত না; সকলেই সামান্য কৃষিবৃত্তি অবলম্বন করিয়া দিনপাত করিত। সম্বৎসরের পরিশ্রমলব্ধ সমস্ত ধান্য পৌষমাসেই মহাজনগণ বলপূর্ব্বক এককালেই লইয়া যাইতেন। গ্রামের প্রায় অনেক লোক এক-সন্ধ্যা আহার করিয়া অতি কষ্টে দিনপাত করিত। দয়াময়ী জননী-দেবী, গ্রামস্থ অনেককেই টাকা ধার দিতেন; কিন্তু কাহারও নিকট পাইবার আশা রাখিতেন না।

 তৎকালীন এডুকেশন গেজেটের সম্পাদক বাবু প্যারীচরণ সরকার ও বারাসতনিবাসী বাবু কালীকৃষ্ণ মিত্র মহাশয়দ্বয়, অগ্রজের পরমবন্ধু ছিলেন। বিধবাবিবাহ ও বালিকা-বিদ্যালয় প্রভৃতি দেশহিতকর কার্য্যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রায় পঞ্চাশ সহস্র মুদ্রা ঋণ হইয়াছিল; একারণ, উক্ত সরকার ও মিত্র মহাশয় অত্যন্ত চিন্তিত হইয়াছিলেন এবং এডুকেশন গেজেটে প্রকাশ করেন যে, বিদ্যাসাগর, দেশহিতকর কার্য্যে যথেষ্ট ঋণগ্রস্ত হইয়াছেন। অতএব তাঁহার বন্ধুবান্ধবের, কর্ত্তব্য যে, সকলে কিছু কিছু সাহায্য করিলে, বিদ্যাসাগর মহাশয় অক্লেশে ঋণ-দায় হইতে পরিত্রাণ পান। যাঁহার সাহায্য করিবার ইচ্ছা হইবে, তিনি এডুকেশন গেজেটের সম্পাদক প্যারীবাবুর নিকট প্রেরণ করিবেন। ইহা