পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২১৩

প্রাচীন লোক, মধ্যমাগ্রজ দীনবন্ধু ন্যায়রত্ন, রাধানগরীনিবাসী কৈলাসচন্দ্র মিশ্র প্রভৃতি উহাদিগকে আশ্রয় দিয়া, বাটীর অতি সন্নিহিত অপর এক ব্যক্তির বাটীতে রাখিয়া, উহাদের বিবাহ-কার্য্য সমাধা করেন। এই বিবাহে অগ্রজ, আন্তরিক কষ্টানুভব করেন এবং প্রকাশ করেন, “গতকল্য ক্ষীরপাই গ্রামের হালদারদিগকে বলিয়াছিলাম যে, আমি এই বিবাহের কোনও সংস্রবে থাকিব না। কিন্তু তোমরা তাহাদের নিকট আমাকে মিথ্যাবাদী করিয়া দিবার জন্য, এই গ্রামে এবং আমার সম্মুখস্থ ভবনে বিবাহ দিলে। ইহাতে আমার যতদূর মনঃকষ্ট দিতে হয়, তাহা তোমরা দিয়োছ। যদিও তোমাদের একান্ত বিবাহ দিবার অভিপ্রায় ছিল, তাহা হইলে ভিন্ন গ্রামে লইয়া গিয়া বিবাহ দিলে, এরূপ মনঃকষ্ট হইত না। যাহা হউক, আমি তাহাদের নিকট মিথ্যাবাদী হইলাম।” কনিষ্ঠ সহোদর ঈশানচন্দ্র উত্তর করিলেন, “উক্ত হালদার বাবুদের সমক্ষে আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, শাস্ত্রানুসারে এই বিবাহ দেওয়া বিধেয় কি না? তাহাতে আপনি উত্তর করিলেন, ইহা শাস্ত্রসম্মত ও ন্যায়ানুগত বলিয়া আমি স্বীকার করি; কিন্তু হালদার বাবুদের মনে দুঃখ হইবে।” ইহাতে ঈশান-ভায়া উত্তর করিলেন, “লোকের খাতিরে এই সকল বিষয়ে পরাঙ্মুখ হওয়া ভবাদৃশ ব্যক্তির পক্ষে দূষণীয়।” ইহা শুনিয়া অগ্রজ মহাশয় ক্রোধাভরে বলিলেন, “অদ্য হইতে আমি দেশ পরিত্যাগ করিলাম।” তিনি কয়েক দিবস দেশে অবস্থিতি করিয়া বিদ্যালয়, চিকিৎসালয়, রাখাল-স্কুল, বালিকাবিদ্যালয়, দেশস্থ ও বিদেশস্থ লোকের ও বিধবাবিবাহকারীদের মাসহরা প্রভৃতির বন্দোবস্ত করিয়া, কলিকাতা প্রস্থান করিলেন। মৃত্যুর পাঁচ ছয় বৎসর পূর্ব্বে বিদ্যালয়, চিকিৎসালয়, বালিকাবিদ্যালয়, প্রভৃতির পুনঃস্থাপনজন্য দেশে যাইবার অভিপ্রায় প্রকাশ করিতেন; কিন্তু দেশের দুর্ভাগ্যবশতঃ নানাকার্য্যে ব্যস্ততাপ্রযুক্ত ও অসুস্থতাজন্য দেশে শুভাগমন করিতে পারেন, নাই।

 বাঙ্গালা ১২৭৬ সালের পূর্ব্বে, রাধানগর গ্রামবাসী জমিদার বাবু উমাচরণ