পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২১৯

হইলে প্রাণান্ত স্বীকারেও পরাঙ্মুখ নাহি। সে বিবেচনায় কুটুম্ববিচ্ছেদ অতিসামান্য কথা। কুটুম্ব মহাশয়েরা আহার-ব্যবহার পরিত্যাগ করিবেন, এই ভয়ে যদি আমি পুত্রকে তাহার অভিপ্রেত বিধবাবিবাহ হইতে বিরত করিতাম, তাহা হইলে আমা অপেক্ষা নরাধম আর কেহ হইত না। অধিক আর কি বলিব, সে স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া এই বিবাহ করাতে, আমি আপনাকে চরিতার্থ জ্ঞান করিয়াছি। আমি দেশাচারের নিতান্ত দাস নাহি; নিজের বা সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক বোধ হইবে, তাহা করিব; লোকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সন্ধুচিত হইব না। অবশেষে আমার বক্তব্য এই যে, সমাজের ভয়ে বা অন্য কোন কারণে নারায়ণের সহিত আহার-ব্যবহার করিতে যাঁহাদের সাহস বা প্রবৃত্তি না হইবে, তাঁহারা স্বচ্ছন্দে তাহা রহিত করিবেন, সে জন্য নারায়ণ কিছুমাত্র দুঃখিত হইবে, এরূপ বোধ হয় না, এবং আমিও তজ্জন্য বিরক্ত বা অসন্তুষ্ট হইব না। আমার বিবেচনায় এরূপ বিষয়ে সকলেই সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রেচ্ছ, অন্যদীয় ইচ্ছার অনুবর্ত্তী বা অনুরোধের বশবর্ত্তী হইয়া চলা, কাহারও উচিত নহে। ইতি ৩১শে শ্রাবণ।

শুভাকাঙ্ক্ষিণঃ
শ্রীঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মণঃ।”

 সন ১২৭৭ সালের ২রা ফাল্গুন, কাশীবাসী পিতৃদেবের পীড়ার সংবাদে অগ্রজ মহাশয় অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত হইলেন এবং অবিলম্বে বীরসিংহাস্থ মধ্যম সহোদর ও আমাকে পত্র লিখিলেন যে, ত্বরায় আমি কাশীযাত্রা করিলাম। তোমরা জননীদেবীকে সমভিব্যাহারে করিয়া, পত্রপাঠমাত্র কাশী যাত্রা করিবে। আমি ও মধ্যম সহোদর দীনবন্ধু ন্যায়রত্ন মহাশয়, অগ্রজ মহাশয়ের আদেশ-পত্র পাইবামাত্র, জননী-দেবীকে সমভিব্যাহারে লইয়া, বীরসিংহ বাটী হইতে কাশীধামে, যাত্রা করিলাম। পিতৃভক্তিপরায়ণ অগ্রজ মহাশয়, দুই সপ্তাহ কাশীতে অবস্থিতি করিয়া, শুশ্রুষাদিকার্য্যে নিরন্তর ব্যাপৃত থাকায়, পিতৃদেব ক্রমশঃ আরোগ্যলাভ