পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২২১

 তৎকালে কাশীস্থ দলপতি ব্রাহ্মণগণ বাসায় উপস্থিত হইয়া অগ্রজকে বলেন যে, “আপনার পিতা কাশীতে অনেক প্রকার কার্য্য করিয়াছেন। আমরা ইহাঁর নিকট অনেক খাইয়াছি, অনেক টাকা ও তৈজসপত্রাদি সময়ে সময়ে গ্রহণ করিয়াছি। আপনার পিতা পরমধার্ম্মিক ও ক্রিয়াবান্। পিতৃপুণ্য-প্রভাবে আপনি জগদ্বিখ্যাত হইয়াছেন। আপনি আমাদিগকে পাঁচ সাত হাজার টাকা দান করিয়া নাম ক্রয় করুন।” ইহা শুনিয়া অগ্রজ মহাশয় তাঁহাদিগকে উত্তর করেন, “আপনারা পিতৃদেবের নিকট পাইয়া থাকেন, তাঁহাকে বলুন, তিনি আপনাদিগকে যেরূপ দিয়া থাকেন, সেইরূপই দিবেন, তাহার ব্যতিক্রম হইবে না।” ইহা শুনিয়া কাশীবাসী বাঙ্গালী দলপতিগণেরা বলেন, “বড় লোক কাশী-দর্শনার্থে আগমন করিলে, আমরা তাঁহাদের নিকট যাইয়া বলিলেই, তাঁহারা আমাদিগকে প্রচুর অর্থ দান করিয়া থাকেন, তাহাতেই আমাদের কাশীবাস হইতেছে। তুমি নামজাদা লোক, তোমাকে অবশ্য দান করিতে হইবে।” ইহা শুনিয়া অগ্রজ মহাশয় উত্তর করেন যে, “আমি কাশী দর্শন করিতে আসি নাই, পিতৃদর্শনের জন্য আসিয়াছি। আমি যদি আপনাদের মত ব্রাহ্মণকে কাশীতে দান করিয়া যাই, তাহা হইলে আমি কলিকাতায় ভদ্রলোকের নিকট মুখ দেখাইতে পারিব না। আপনার যতপ্রকার দুষ্কর্ম্ম করিতে হয়, তাহা করিয়া, দেশ পরিত্যাগ-পূর্ব্বক কাশীবাস করিতেছেন। এখানে আছেন বলিয়া, আপনাদিগকে যদি আমি ভক্তি বা শ্রদ্ধা করিয়া বিশ্বেশ্বর বলিয়া মান্য করি, তাহা হইলে আমার মত নরাধম আর নাই।” ইহা শুনিয়া ব্রাহ্মণের বলেন, “আপনি কি তবে কাশীর বিশ্বেশ্বর মানেন না?” ইহা শুনিয়া দাদা উত্তর করিলেন, “আমি তোমাদের কাশী বা তোমাদের বিশ্বেশ্বর মানি না।” ইহা শুনিয়া কেশেল ব্রাহ্মণের ক্রোধান্ধ হইয়া বলেন, “তবে আপনি কি মানেন?” তাহাতে অগ্রজ উত্তর করেন, “আমার বিশ্বেশ্বর ও অন্নপূর্ণা, উপস্থিত এই পিতৃদেব ও জননী-দেবীবিরাজমান। দেখ, জননীদেবী আমাকে দশ মাস গর্ভে ধারণা করিয়া কতই কষ্ট ভোগ