পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

করিয়াছেন। বাল্যকালে আমাকে স্তনদুগ্ধ পান করাইয়া পরিবদ্ধিত করিয়াছেন। আমার জন্য কতই কষ্ট ভোগ করিয়াছেন, কতই যত্ন পাইয়াছেন। আমি পীড়িত হইলে জননী, আহার-নিদ্রা পরিত্যাগ করিয়া, কিসে আমি আরোগ্য লাভ করি, নিরন্তর এই চিন্তায় নিমগ্ন হইতেন। পিতৃদেব কত কষ্ট স্বীকার করিয়া আমাকে লেখাপড়া শিখাইয়াছেন, বাল্যকালে অন্ন-বস্ত্র। দিয়াছেন। পিতামাতার আন্তরিক যত্নেই। আমি পরিবর্দ্ধিত হইয়াছি। পিতা, বাল্যকালে আমাকে স্কন্ধে আরোহণ করাইয়া, লেখাপড়া শিক্ষার জন্য কলিকাতায় লইয়া গিয়াছিলেন। তথায় আমার পীড়া হইলে, মলমূত্রাদি পরিষ্কার করিয়া দিয়াছেন। সুতরাং এতাদৃশ জনক-জননীকেই আমি পরমেশ্বর জ্ঞান করি, এবং সেইরূপই আমি শ্রদ্ধা-ভক্তি করিয়া থাকি। ইহাঁদের উভয়কে সন্তুষ্ট রাখিতে পারিলেই, আমি আপনাকে চরিতার্থ জ্ঞান করিব। ইহাঁদিগকে অসন্তুষ্ট করিলে, বিশ্বেশ্বর ও অন্নপূর্ণ আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হইবেন। পিতামাতাকে অসন্তুষ্ট করিলে, সকল দেবতাই আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হইবেন। দেখুন, আপনারা শ্রাদ্ধের সময় কি বলিয়া থাকেন। অর্থাৎ পিতা স্বৰ্গঃ পিতা ধর্ম্মঃ পিতা হি পরমং তপঃ, পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রায়ন্তে সর্বদেবতা।

 ব্রাহ্মণেরা কিছু না পাইয়া, ক্রোধান্ধ হইয়া প্রস্থান করেন। ১৫ই ফাল্গুন অগ্রজ মহাশয়, জননী-দেবী, মধ্যম ও তৃতীয় সহোদরকে পিতৃদেবের শুশ্রূষাদিকার্য্য নির্ব্বাহের জন্য রাখিয়া, স্বয়ং কলিকাতা গমন করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই পিতৃদেব সম্পূর্ণরূপ আরোগ্য লাভ করেন। জননীদেবী, ফাল্গুন ও চৈত্র দুই মাস কাল কাশীবাস করিয়া, অগ্রজকে অনুরোধ করিয়া, কয়েকটা নিরুপায়া হতভাগিনী স্ত্রীলোকের অন্নকষ্ট নিবারণ করেন। তাহাতে ঐ অশীতিবর্ষবয়স্ক স্ত্রীলোকেরা পরমসুখে কাশীবাস করেন। জননীদেবী, ফান্তন ও চৈত্র দুইমাস কাল কাশীবাস করিয়া, বিষম বিসূচিকারোগে আক্রান্ত হইয়া, ১২৭৭ সালের চৈত্র-সংক্রান্তির দিবস স্বামী, পুত্র, পৌত্র ও দৌহিত্রাদি রাখিয়া কাশীলাভ করেন। জননীর মৃত্যুসংবাদে অগ্রজ মহাশয় যৎপরোনাস্তি