পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

 এই সময়ে কলিকাতাস্থ সনাতন-ধর্ম্মরক্ষিণী সভার সভ্য মহাশয়েরা, বহুবিবাহের নিবারণ-বিষয়ে বিলক্ষণ উদ্যোগী হইয়াছিলেন। তাঁহাদের নিতান্ত ইচ্ছা, এই অতি জঘন্য, অতি নৃশংস প্রথা রহিত হইয়া যায়। এই প্রথা নিবারিত হইলে, শাস্ত্রের অবমাননা ও ধর্ম্মের ব্যতিক্রম ঘটবে কি না, এই আশঙ্কার অপনয়ন জন্য, সভার সভ্য মহোদয়েরা ধর্ম্মশাস্ত্র-ব্যবসায়ী প্রধান প্রধান পণ্ডিতের মত গ্রহণ করিতেছিলেন এবং রাজদ্বারে আবেদন করিবার অপরাপর উদ্যোগ দেখিতেছিলেন। তাঁহারা সাদভিপ্রায়-প্রণোদিত হইয়া, যে অতি মহৎ দেশহিতকর ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন, হয় ত সে বিষয়ে তাঁহাদের কিছু সাহায্য হইতে পরিবে, এই ভাবিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয়, বহুবিবাহ নামক পুস্তক মুদ্রিত ও প্রচারিত করেন। ইহা প্রকাশিত হইবার, অব্যবহিত পরে, সন ১২৭৮ সালের ১লা শ্রাবণ প্রতিবাদী মুরশিদাবাদ-নিবাসী শ্রীযুত গঙ্গাধর কবিরত্ন, বরিশাল-নিবাসী শ্রীযুত রাজকুমার ন্যায়রত্ন, শ্রীযুত ক্ষেত্রপাল স্মৃতিরত্ন, শ্রীযুত সত্যব্রত সামশ্রমী ও শ্রীযুত তারানাথ তর্কবাচস্পতি মহাশয় প্রভৃতি কয়েক জন বিখ্যাত পণ্ডিত পুস্তক লিখিয়া প্রতিবাদ করেন যে, বহুবিবাহ শাস্ত্রসম্মত; -শাস্ত্রবিরুদ্ধ নহে। সুতরাং দাদা, তর্কবাচস্পতি মহাশয় প্রভৃতি প্রতিবাদীদের প্রকাশিত মত খণ্ডন করিয়া, বহুবিবাহ যে অতি জঘন্য, অতি নৃশংস ব্যবহার ও শাস্ত্র-বিরুদ্ধ, ইহা হইতে অশেষবিধ অনর্থ সংঘটন হইতেছে, এই সমুদয় দেখাইয়া, যত্ন ও পরিশ্রম-সহকারে শাস্ত্রোদ্ধৃত বচনসমূহ সঙ্কলন করিয়া মুদ্রিত ও প্রচারিত করেন।

 শ্রীযুত তারানাথ তর্কবাচস্পতি মহাশয় দেশবিখ্যাত অধ্যাপক। ইনি পূজ্যপাদ অগ্রজ মহাশয়ের পরমবন্ধু ও পরম আত্মীয়। ইহাঁদের পরস্পর বাল্যকাল হইতে সম্ভাব ছিল, ইহা সকলেই অবগত আছেন। এক্ষণে এতদুপলক্ষে এরূপ যে মনান্তর ঘটবে, তাহা স্বপ্নের অগোচর। পাঁচ ছয় বৎসর পূর্বে জঘন্য বহুবিবাহ-নিবারণ-মানসে ব্যবস্থাপক-সমাজে যে আবেদন হয়, তাহা বাচস্পতি মহাশয় স্বয়ং আদ্যোপান্ত পাঠ করিয়া স্বাক্ষর করিয়াছিলেন। এক্ষণে,