পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

কর্ম্মটার।

 কলিকাতায় সর্বদা অবস্থিতি করিলে, দাদার শরীর সুস্থ হওয়া দুষ্কর। কারণ, প্রাতঃকাল হইতে নিরুপায় লোক আসিয়া, কেহ চাকরীর জন্য, কেত সুপারিসপত্রের জন্য, কেহ মাসহরার জন্য, কেহ কন্যার বিবাহের সাহায্যদান জন্য, কেহ বস্ত্রের জন্য, কেহ পুস্তকের জন্য, কেহ বিনা বেতনে পুত্ত্র বা আত্মীয়-স্বজন প্রভৃতিকে বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট করিয়া দিবার জন্য সর্ব্বদা বিরক্ত করিয়া থাকেন। দ্বার অবারিত ছিল, লোকের প্রবেশ-নিবারণ জন্য দ্বারে প্রহরী ছিল না। যাহার যখন ইচ্ছা, বিনা অনুমতিতে বাটী প্রবেশ করিয়া দেখা করিতে পারিত। সচরাচর বড় লোকের দ্বারে যেমন প্রহরী উপস্থিত দেখিতে পাওয়া যায়, তাঁহার সে আড়ম্বর ছিল না। সুতরাং প্রাতঃকাল হইতে রাত্রি নয়টা পর্য্যন্ত, সর্ব্বদা নানাপ্রকারের লোক আসিয়া বিরক্ত করিত। প্রাতঃকাল হইতে সমাগত অধিক লোকের সহ কথাবার্তা ও গল্প করিয়া, রাত্রিতে নিদ্রা হইত না; সুতরাং উদরাময় হইয়া কষ্ট পাইতেন। ইত্যাদি কারণে আত্মীয় বন্ধু ও চিকিৎসকগণের পরামর্শানুসারে, সাঁওতাল পরগণার অন্তঃপাতী কর্ম্মটারে রেলওয়ে ষ্টেশনের অতি সন্নিহিত এক বাঙ্গালা-ঘর ক্রয় করেন। মধ্যে মধ্যে তথায় যাইয়া কিছু সুস্থ থাকিতেন; এজন্য তথায় অবস্থিতি করিতেন। ক্রমশঃ তথায় প্রতিবাসী সাঁওতালগণের সহিত তাঁহার উত্তমরূপ সদ্ভাব ও পরিচয় হইয়াছিল। সাঁওতালদের মধ্যে অনেকে তাঁহার বাগানে মজুরি কার্য্য করিতে আসিত; তাহাদের দৈনিক বেতন কিছু বেশী করিয়া দিতে লাগিলেন। সঁওতালদের সংস্কার ছিল যে, বাঙ্গালীরা লোক ভাল নয়; কিন্তু দাদার উদারতা ও দয়া দেখিয়া, তাহারা সকলেই পরিতোষ লাভ করিয়াছিল। ঐ স্থানীয় লোকের লেখাপড়া শিক্ষার জন্য, তথায় স্কুল স্থাপন করিয়াছিলেন; এই বিদ্যালয়ে আজও পর্যন্ত মাসিক কুড়ি টাকা ব্যয় করিয়া আসিতেছিলেন। প্রতি বৎসর পূজার সময় কর্ম্মটারের সাঁওতালদের